Breaking News
Home / Blog / প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম

প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম

প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম

প্যারাসিটামল  এই নামটি সাথে আমরা সচরাচর সকলেই পরিচিত। প্যারাসিটামল এর নাম শোনেনি হয়তো এমন মানুষ খুজে পাওয়াও অসম্ভব প্রায়। সাধারণত প্যারাসিটামল জ্বর, মাথাব্যথা ইত্যাদি রোগের উপশমকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমরা সকলেই কোন না কোন সময় প্যারাসিটামল ঔষধ সেবন করেছি। আমরা হয়তো অনেক মানুষই জানিনা প্যারাসিটামলের কাজ কি, কিভাবে আমাদের শরীরে কাজ করে, এর কি কি উপাদান রয়েছে যা আমাদের সুস্ব হতে সাহায্য করে।

বাণিজ্যিক নাম – টাইলেনল, প্যানাডল। প্যারাসিটামল মূলত একটি জেনেরিক নাম। বিভিন্ন ঔষধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের নিজেদের নির্বাচিত  নামে প্যারাসিটামল  বাজারজাত করে থাকে। এই নাম গুলোকে ‘ব্রান্ড নেম’ বলে।

প্যারাসিটামল এর কাজ কি ?    

প্যারাসিটামল ১৮৭৭ সালে আবিষ্কার করা হয় তবে অনেকেই বলে থাকে এটি ১৮৫২ সালের দিকে আবিষ্কার করা হয়েছে ( মতান্তরে )। 

প্যারাসিটামল খুবই সহজ লভ্য এবং সুলভ মূল, যার কার্যক্ষমতাও বেশ।


‘অ্যানালজেসিক’ যা (ব্যথা নাশক) হিসেবে কাজ করে এবং ‘অ্যান্টিপাইরেটিক’ যা (জ্বর নাশক) হিসেবে কাজ করে থাকে। এই দুটো উপাদানের শ্রেণীয় ঔষধ গুলো খুব সহজেই পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়। অ্যাসিটামিনোফেন এর আরেকটি নাম (প্যারাসিটামল)।

প্যারাসিটামল এর কাজ কি ?

প্রধানত জ্বর এবং ব্যথা ( মাথা, পেশী, দাঁত, হাড়, কোমর ইত্যাদি) এই দুটো কারণেই মানুষ প্যারাসিটামল সেবন করে থাকে। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া খুবই কম। তবে ২৪ ঘন্টার ভিতর সর্বোচ্চ ৪০০০ মিলিগ্রাম (৪ গ্রাম) পর্যন্ত গ্রহণ করা যায়। প্যারাসিটামল ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট বা ক্যাপলেট আকারে পাওয়া যায়। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য সর্বোচ্চ ১০০০ মিলিগ্রাম (১ গ্রাম) প্রতি ডোজে। প্যারাসিটামল ডাক্তারের চিকিৎসাপত্র ব্যতিরেকেই কিনতে পাওয়া যায়। তাই অনেকে যখন-তখন অর্থাৎ সামান্য উপসর্গে প্যারাসিটামল গ্রহণ করে।

প্যারাসিটামল এর দাম কত?

650Mg প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এর একপাতা অর্থাৎ ১৫টি ট্যাবলেটের দাম ৩০.৯১ টাকা। কিন্তু বর্তমানে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ১০ শতাংশ দাম বৃদ্ধিতে প্যারাসিটামলের দাম বেড়ে প্রতি পাতা ৩৪ টাকা হয়েছ।

প্যারাসিটামল এর দাম কত?

বিভিন্ন মেডিসিন শপ এ গেলে তারা আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ওষুধের দাম বেশি রেখে থাকে। আমরা এর সঠিক দাম না জানার কারণে তারা আমাদের কাছ থেকে এই সুবিধাটি  নিচ্ছে। 

DIMS অ্যাপ এর মাধ্যমে আপনি যেকোন ঔষধের দাম জেনে নিতে পারেন খুব সহজেই। তাহলে মেডিসিন শপে গিয়ে আপনাকে কোন ওষুধের দাম বেশিও দিতে হবে না আর কোনো রকম বিপাকেও পড়তে হবে না। 

প্যারাসিটামল কেন খায়?

প্যারাসিটামল মূলত একটি মেডিসিনের নাম।

আমরা মেডিসিন কখন নিয়ে থাকি?

আমরা যখন অসুস্থ হই তখন অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসার জন্য আমরা মূলত মেডিসিন নিয়ে থাকি। 

প্যারাসিটামল কেন খায়?

জ্বর এবং ব্যথা জনিত সমস্যা গুলোর কারণে প্যারাসিটামল ব্যবহার হয়ে থাকে।প্যারাসিটামল খাওয়ার ফলে শরীরে জ্বর কিংবা বিভিন্ন ব্যথা খুব সহজেই দূর হয়।এমনকি পেশিজনিত ব্যথা গুলোকেও প্যারাসিটামল দূর করতে সক্ষম। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন আমরা সকলেই কোন না কোন সময়ে জ্বরের কিংবা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ব্যবহার করেছি। কিন্তু এর জন্য আমাদের কোন ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন এর প্রয়োজন পড়েনি। কারণ এটি সহজলভ্য এবং খুব বেশি ক্ষতিকারক নয়। তবে আমাদের মনে রাখা উচিত কোনকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। 

বাজারে খোঁজ করলে ইদানিং অনেক কোম্পানির প্যারাসিটামল পাওয়া যায়। ভোক্তাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে বাজার থেকে (প্যারাসিটামল + মিথিওনিন) মিক্সচার টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে (নাপা সফট, প্যারাডট)। এগুলোতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া প্যারাসিটামল,প্যারাসিটামল+ক্যাফেইন এর মিক্সচারটি ঝুঁকিমুক্ত এবং নিরাপদ। বর্তমানে বাজারে গুলো পাওয়া যাচ্ছে। 


প্যারাসিটামল কি খালি পেটে খাওয়া যায়?

ডাক্তারের সবসময় বলে অসুস্থ না হলে ঔষধ খেতে না। কিন্তু আমাদের দেশে ছোট খাটো সাধারণ বিষয় গুলো নিয়ে মানুষ মুড়ির মত ওষুধ খাওয়া শুরু করে। প্যারাসিটামল ব্যথানাশক এর জন্য কাজ করে আমরা কমবেশি সবাই জানি। কোন ব্যথানাশক ঔষধ খালি পেটে খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। কমপক্ষে একটি বিস্কুট হলেও খেয়ে নেওয়া উচিত। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি জাতীয় ঔষধ খালি পেটে খাওয়া খুবই বিপদজনক। ব্যথানাশক ঔষধের কার্যক্ষমতা সবসময় বেশি হয়ে থাকে।




প্যারাসিটামল বেশি খেলে কি হয়?

অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেললে যেমন আমাদের অসুস্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, ঠিক তেমনি যে কোন ঔষধ অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে কিংবা বেশি খেয়ে ফেললে সেটা তার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।


সাধারণত কোন মানুষ যদি প্যারাসিটামল ১০ থেকে ১২ গ্রাম সেবন করে ফেলে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতলে নিয়ে যেতে হবে এবং তার পাকস্থলী ওয়াস করাতে হবে। কারণ এতে বিষক্রিয়া ঘটে। কিডনি কিংবা লিভার জনিত রোগে যারা ভুগছেন তারা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল ব্যবহার করবেন না। কারণ এতে আপনার রোগের জটিলতা আরো বেড়ে যাবে। এমনকি যারা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তারাও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল সেবন করতে পারবেন না। 


প্যারাসিটামলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্যারাসিটামলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্যারাসিটামল সেবনে কিছু সতর্কতা রয়েছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলতে অতিরিক্ত সেবনে হূদরোগ, ক্যান্সার, কিডনী, লিভার, মস্তিষ্কের নানা রকম ক্ষতি, এবং রক্তে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। 
এছাড়া আরো সতর্কতার সাথে বলে দেয়া হয় ১২ বছরের নিচে কেউ মিথিওনিন যুক্ত প্যারাসিটামল সেবন করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ।
 

প্যারাসিটামলের সুবিধাঃ

  • খুব সহজেই পাওয়া যায়। 
  • দামের দিক থেকে খুব কম। 
  • কার্যকারিতা ভালো। 
  • খুব দ্রুত কাজ করে। 

প্যারাসিটামলের অসুবিধাঃ

  • অতিরিক্ত সেবনে হৃদরোগের কারণ। 
  • মিথিওনিন যুক্ত তাই ১২ বছরের কম বয়সী কেউ এটি সেবন করতে পারবেনা। 
  • উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তারা প্যারাসিটামলের গ্রহণ করতে পারবে না। 

শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পূর্বে আবশ্যই শিশুর বয়স অনুযায়ী নিম্নে উল্লেখিত নিয়মে ডোজ প্রদান করতে হবে। 

শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ার নিয়ম

প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম:

আমরা সবাই জানি প্যারাসিটামল সিরাপ রয়েছে বাচ্চাদের জন্য। যা ১০-১৫ মিলি তাদের বয়স অনুযায়ী এবং ওজন অনুসারে ৪-৬ ঘন্টা পর পর খাওয়াতে হয়। 
প্যারাসিটামল সাপোজিটরি


পায়ুপথে প্রয়োগ করার জন্য রয়েছে সাপোজিডর। জ্বরের মাত্রা বেড়ে গেলে সে ক্ষেত্রে সাপোজিটর এর মাধ্যমে জ্বর কমানো খুবই সহজ হয়।  আমরা অনেকেই দেখে থাকি বাচ্চাদের যখন জ্বর হয় তারা কোন ওষুধ খেতে চায় না বরং, তারা কোনো খাবারই গ্রহণ করতে চায় না। সে ক্ষেত্রে সাপোজিডরের ভূমিকা অপরিসীম। 


শিশুদের সাপোজিটরি ব্যবহারের নিয়ম:

  • শিশুদের ওজন অনুসারে এবং বয়স অনুসারে সাপোজিটর দেয়া হয়। ৪ থেকে ৬ ঘন্টা অন্তর অন্তর বাচ্চাদের সাপোজিটার দেওয়া যেতে পারে। 
  • ১০ থেকে ২০ মিলির বেশি নয়। ওজন অনুযায়ী দিতে হবে। 



একটা জিনিস মনে রাখা ভাল বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মুখে যে কোন ঔষধ/সিরাপ খাওয়ানো ভালো সে ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য খুবই সুবিধা হয়। তবে কোন বাচ্চা যদি খেতে না পারে সে ক্ষেত্রে সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে। 



জ্বরে সাপোজিটরি নিলে কোন সমস্যা হয়?

  • জ্বরে সাপোজিটরি নিলে কোন রকম সমস্যা নেই। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ২০ মিলিগ্রাম। 
  • একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে। 

অনেকেই ভেবে থাকে সাপোজিটর নিলে সাথে সাথে জ্বর কমে যায় সেক্ষেত্রে এটা শরীরের জন্য কি পরবর্তীতে কোন সমস্যা হতে পারে? 

জ্বরে সাপোজিটরি নিলে কোন সমস্যা হয়?

আসলে এই ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল জ্বরের মাত্রা যখন তীব্রতায় পৌঁছে যায় ঠিক তখনই সাপোজিটর ব্যবহার করা হয়। যখন নরমাল ওষুধে কাজ করতে একটু সময় নেয় শরীর থেকে জ্বর কমাতে একটু বেশি সময় নিয়ে নেয় তখন রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে সাপোজিটর ব্যবহার করা হয় যাতে রোগী প্রথমে নরমাল পজিশনে শরীরকে নিয়ে আসে এবং তারপর নরমাল ওষুধ গুলো গ্রহন করে সে সুস্থ হতে পারে। 



প্যারাসিটামল একটি খুবই ভালো মানের ঔষধ যা শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সকলের জন্যই রয়েছে। প্যারাসিটামলের কার্যকারিতাও খুব ভালো সে ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ডক্টর কিংবা ব্যথা উপশমের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল সাজেস্ট করে থাকেন। 



তবে যে কোন ঔষধ খাবার সঠিক নিয়ম জেনে তারপর খাওয়া উচিত। কারণ শিশুদের জন্য একরকম নিয়ম বয়স্কদের জন্য একরকম নিয়ম তাই নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করাই ঠিক নয়। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *