আসসালামু আলাইকুম, আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব যাকাত হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে। বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় অনেকেই জানতে চেয়েছেন। অনেকেই গুগলে বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় লিখে সার্চ করেন। বিশেষ করে তাদের জন্য যাকাত হিসাব করার নিয়ম বা বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় সে সম্পর্কে আর্টিকেল নিয়ে হাজির হয়েছে। যাকাত কাদের উপর ফরজ বা কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয় সবকিছুই থাকবে আজকের পোস্ট “বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়” এর মধ্যে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক যাকাত হিসাব করার নিয়ম সমূহ।
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি যাকাত। যাকাত কাদের উপর ফরজ? যখন কোন ব্যক্তি কালেমা পড়ে ইসলামের সীমার মধ্যে দাখিল হয়ে যায়, ঠিক তখন থেকেই ইসলামের যাবতীয় সকল বিধি নিষেধ মেনে চলা তার জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়। সচ্ছল মুসলমানের প্রতি সৃষ্টিকর্তার অলংঘনীয় নির্দেশ হচ্ছে যাকাত আদায় করা। কোন মুসলমান যদি স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এ নির্দেশ অমান্য করে এর অর্থ হচ্ছে সে আল্লাহ তার রাসূলের অমান্য করলো। এজন্য আমাদের বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় এ বিষয়ে জেনে রাখা উচিত।
যাকাত কি? যাকাত কাকে বলে?
যাকাত শব্দের কিছু আভিধানিক অর্থ রয়েছে। নিম্নে অর্থ গুলো দেওয়া হলো-
-
বৃদ্ধি পাওয়া
-
পবিত্র করা
-
পরিশুদ্ধ
-
চমৎকার গুণ কীর্তন
-
প্রশংসা
-
প্রাচুর্য ইত্যাদি
পারিভাষিক অর্থে-
“যাকাত তাকে বলে যেটা প্রদান করার ফলে মন বা আত্মা পবিত্রতা লাভ করে, সম্পদের বৃদ্ধি ঘটে এবং সম্পদ পরিচ্ছন্ন হয়।” – ইমাম ইবনুত তাইমিয়ার মতামত।
অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে যাকাত প্রদান করা উত্তম। রমজান মাসের যেকোনো একটি দিনকে বছরের সমাপনী দিন হিসাব করে যাকাতযোগ্য খাতের সব সম্পদের হিসাব করে যাকাত নির্ধারণ করতে হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অন্তত নিসাব পরিমাণ সম্পন্ন পূর্ণ এক চান্দ্র বছর (৩৫৪ দিন) ঘুরে আসতে হবে। সম্পূর্ণ সম্পদের বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়।
ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি যাকাত। যাকাত কাদের উপর ফরজ? প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যেমন ভাবে নামাজ ফরজ হয়ে যায়, তেমনি সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর ঋণ মুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকানার এক বছর পূর্ণ হলেও আবশ্যিকভাবে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হয়ে যায়।
বর্তমান সময়ে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী বা চাকুরিজীবীকেই দেখা যায় তাদের উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে আছে। কিন্তু বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় বা যাকাত হিসাব করার নিয়ম না জানার কারণে যাকাত আদায় না করে গুনাহগার হচ্ছেন। এজন্য আমাদের জেনে নেওয়া কর্তব্য যে সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে আমি হিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হব এবং আমার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। এই পোস্টটি তৈরিই করা হয়েছে বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় জানে না তাদের জন্য।
বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় – যাকাত হিসাব করার নিয়ম
ইসলামি শরিয়াত মোতাবেক আপনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে। কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয় এভাবে হিসাব না করে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যেভাবে হিসাব করতে বলছেন সেভাবে আমাদের হিসাব করতে হবে। নিম্নে তা প্রদত্ত করা হল-
৭.৫ তোলা/ভরি স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ তোলা/ভরি রূপা হচ্ছে নিসাবের পরিমান। আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৩৯৪; আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯
দেশি-বিদেশি মুদ্রা সহ ব্যবসায়িক পণ্যের হিসাব নির্ধারণের সোনা রুপা হলো পরিমাপক। এক্ষেত্রে অচ্ছল অসহায়দের জন্য যে একটি বেশি লাভজনক হবে, সেটাকেই পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরীয়তের নির্দেশ। এজন্য মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমান সময়ে রুপার হিসাবে পরিমাপক হিসেবে গণ্য করা হয়।
যারা বললেন, বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়? যার কাছে সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা এর সমমূল্যের দেশে-বিদেশি টাকা মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ রয়েছে, তার উপরে যাকাত দেওয়া ওয়াজিব হয়েছে। যে সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে, সেই সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ (২.৫০ শতাংশ) যাকাত দিতে হবে।
বর্তমানে বাজারে ভরিপ্রতি রুপার মূলনের ১০০০ টাকা। মানভেদে এই টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে রুপার মূল্য ভরি প্রতি ১১০০ টাকা ধরে সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্য আসে ৫৭,৭৫০/- ( সাতান্ন হাজার সাতশত পঞ্চাশ টাকা)। ১১০০*৫২.৫ = ৫৭,৭৫০/- [যাকাত হিসাব করার পূর্বে স্বর্ণ বা রুপার বর্তমান বাজার মূল্য ভালো ভাবে জেনে নিবেন]
বর্তমানে বাজারে ভরিপ্রতি স্বর্ণের মূল্য ৯১,০০০ টাকা। মানভেদে এই টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়ে থাকে। আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে রুপার মূল্য ভরি প্রতি ৯১,০০০ টাকা ধরে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণের মূল্য আসে ৬৮২,৫০০/- (ছয় লক্ষ বিরাশি হাজার পাঁচশত টাকা)। ৯১,০০০*৭.৫ = ৬৮২,৫০০/-
[যাকাত হিসাব করার পূর্বে স্বর্ণ বা রুপার বর্তমান বাজার মূল্য ভালো ভাবে জেনে নিবেন]
অর্থাৎ যদি কেউ এরিন মুক্ত হওয়া এবং সারা বছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পরেও মোটামুটি সর্বনিম্ন ৫৭,৭৫০/- (সাতান্ন হাজার সাতশত পঞ্চাশ টাকা) বা এর সমপরিমাণ মূল্যের ব্যবসায়িক পণ্যের মালিক হন, তাহলে তার উপর যাকাত দেওয়া ওয়াজিব হবে। রাব্বুল আলামিন আমাদের যথাযথ সময়ে যথাযথভাবে যাকাত আদায় করার তাউফিক দান করুন। আমিন
যে সকল মালে যাকাত দিতে হয়
সোনা রুপা, টাকা-পয়সা, গরু, ছাগল, মহিষ, উট, ভেড়া, জমিনে উৎপাদিত ফসল, মাটির নিচে প্রাপ্ত গুপ্তধন, খনিজ দ্রব্য, ব্যাংকে জমানো টাকা, শেয়ার বন্ড ইত্যাদি সহ এক কথায় মুসলমানদের প্রায় সব মালাই যাকাত দিতে হয়।
যাকাত দেওয়ার নিয়ম – যাকাত ক্যালকুলেটর – কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়
১। গবাদি পশুঃ ছাগল, উট, ভেড়া, ঘোড়া যদি মালিকের শ্রম ব্যতিরেকে চারণ ভূমিতে বছরের অধিক সময় বিচরণ করে প্রতিপালিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ নিজের ঘাস, পানি নিজেই সংগ্রহ করে। যেমন-চর অঞ্চলে এরূপ দৃশ্য বেশি দেখা যায়, এমন গবাদি পশুর জন্য যাকাত দেওয়া ফরজ।
২। ভূমির উৎপাদনঃ ধান গম জব আঙ্গুর খেজুর শস্য ও ফলমূল যায় সেই ব্যতীত বৃষ্টি বা নদীর পানি দ্বারা উৎপাদিত হয়ে থাকে। এই উৎপাদিত ফসলের ১০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেওয়ার নিয়ম। আপনার ফসল কম বেশি যাই হোক না কেন, মোট ফসলের এক দশমাংশ হারে যাকাত দিতে হবে। তবে এই সমস্ত ফসল যদি সেচের পানির সাহায্যে উৎপন্ন হয়ে থাকে। তবে, ২০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেওয়ার নিয়ম।
৩। সোনা রুপার যাকাতঃ যার কাছে সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা এর সমমূল্যের দেশে-বিদেশি টাকা মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ রয়েছে, তার উপরে যাকাত দেওয়া ওয়াজিব হয়েছে। যে সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে, সেই সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ (২.৫০ শতাংশ) যাকাত দিতে হবে।
৪। জমিনে গচ্ছিত গুপ্তধনঃ শরীয়তের পরিভাষায় জমিনের গচ্ছিত গুপ্তধনকে কানজ বলা হয়ে থাকে। খনিজ ধাতব দ্রব্য গুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনা, রুপা, তারা ইত্যাদিকেও মা’আদিন বলা হয়ে থাকে। আর এই দ্রব্য দুদিকে একসাথে রেকায বলা হয়ে থাকে। মুসলমান যে কোন অবস্থাতেই থাকুক না কেন তাকে কানযেরও এক পঞ্চমাংশ যাকাত দিতে হবে। এটাকে বলা হয় খুমুসও।
৫। ব্যবসায়ী মালামালঃ ব্যবসায় নিয়োজিত সম্পদ যন্ত্রপাতি পণ্যদ্রব্য খাদ্য কাপড় সাজ সরঞ্জাম মূল্যবান পাথর অলংকার পশু গাছপালা জমি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থাবর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ হলে এবং বছর পূর্ণ হলে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেওয়ার নিয়ম।
৬। শেয়ার বন্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ড, সিকিউরিটি ইত্যাদি অর্থের মূল্যবান বহন করে থাকে। সেটাতেও যাকাত দেওয়ার নিয়ম।
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় সে সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় লিখে গুগলে সার্চ করে থাকি। বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় সে সম্পর্কে জানা আমাদের সবারই উচিৎ। আশা করি, আজকের পোস্টটি ভালো করে পড়ার পর বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না। তারপরও আমি আপনাদের বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় বা যাকাত হিসাব করার নিয়ম ভালোভাবে বোঝার সুবিধার্থে একটি ভিডিও ক্লিপ দিয়ে দিলাম।