আজ আমাদের আলোচনার বিষয় মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ নিয়ে। সামনে আসতে চলেছে ইবাদতের মাস, রমজান মাস। ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত পাক-পবিত্র থাকা অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবে ওযু করা। পরিপূর্ণভাবে ওযু করার পরেও এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ। শুধুমাত্র মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ নয়, পুরুষের ক্ষেত্রে ও একই কারণে অজু ভঙ্গ হয়। অনেকেই গুগলে সার্চ করে থাকেন মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ কি কি। তাই আজ আমরা মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ নিয়ে হাজির হয়েছি।
পুরুষ বা মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই উচু ভঙ্গের কারণ এক। কি কি কারণে অজু ভঙ্গ হয়ে যায়? কারণ সমূহগুলো নিম্ন আলোচনা করা হলো। চলুন জেনে নেওয়া যাক পুরুষ বা মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ কি কি।
জেনে নেওয়া যাক ওজু ভঙ্গের ৭টি কারণ-
১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা হইতে কোন কিছু বের হওয়া
২. মুখ ভরিয়া বমি হওয়া
৩. শরীরের কোন জায়গা থেকে রক্ত, পুচ, পানি বাহির হইয়া গড়িয়া পড়া
৪. থুতুর সাথে রক্তের ভাগ সমান অথবা বেশি হওয়া
৫. কাত বা চিত হইয়া হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
৬. নামাজের উচ্চস্বরে হাসা
৭. পাগল, মাতাল ও অচেতন হইলে/জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া
১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা হইতে কোন কিছু বের হওয়া
প্রস্রাব পায়খানা কৃমি বায়ু মজী মনি এবং মেয়েদের হায়েজ বা নিফাসের রক্ত পেশাব পায়খানার রাস্তা হইতে বের হলে ওযু ভঙ্গ হইয়া যায়। (আবু দাউদ:২০৬) অথবা হাদিসের ভাষায় শব্দ করে বা প্রকাশ্যে হাওয়া বের হলে অজু ভেঙে যাবে, অর্থাৎ আপনাকে পুনরায় ওজু করতে হবে।
২. মুখ ভরিয়া বমি হওয়া
অনেক সময় ওযু করার পর অসুস্থতার কারণে বা বিভিন্ন কারণে বমি হতে পারে। যদি আপনি অজু করে গাড়িতে ওঠেন, অনেক সময় গাড়িতে উঠলে গাড়ির এসির গন্ধ, পেট্রোলিয়াম জাতীয় পোড়া গন্ধে অনেকের বমি বমি ভাব হয় এবং সেই বমি যদি মুখ ভরিয়া হয় তাহলে আপনার অজু ভেঙ্গে যাবে। অর্থাৎ আপনাকে পুনরায় ওজু করতে হবে।
৩. শরীরের কোন জায়গা থেকে রক্ত, পুচ, পানি বাহির হইয়া গড়িয়া পড়া
অপারেশন করে পাইপের সাহায্যে প্রস্রাব পায়খানা বের করলে অথবা শরীরের কোন ক্ষতস্থান হইতে বেশি পরিমাণ রক্ত, পুজ বা বমি বের হলে ওযু ভঙ্গ হইয়া যায়। (ফাতাওয়া বিন বায ৩/২৯৪)
৪. থুতুর সাথে রক্তের ভাগ সমান অথবা বেশি হওয়া
আপনি থুতু ফেলছেন সেই পরিমাণ রক্ত যদি মুখ থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবে। দাঁতের গোড়া থেকে অথবা মুখে কোন ক্ষত থেকে থুথুর সাথে রক্ত বের হওয়া এবং রক্তের ভাগ সমান অথবা বেশি হওয়া পুরুষ বা মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ অন্যতম কারণ।
৫. কাত বা চিত হইয়া হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
শুয়ে বা কোন কিছুর সাথে হেলান দিয়ে ঘুমালে অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। তবে বসে বসে ঘুমালে অজু ভাঙ্গে না। অজু করে এসেছেন, মসজিদে এসি আছে এসির নিচে বসলেন। তারপর একটু আরাম বোধ করে আপনি ঘুমিয়ে গেলেন। অনেকেই মসজিদে এসে ঘুমিয়ে যায়। অনেকের মসজিদে এসে ঘুমানোর অভ্যাস আছে। মসজিদের দেয়ালের সাথে, পিলারের সাথে অথবা ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়ে। যখনই শুনে একামত হচ্ছে তাড়াহুড়ো করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। ওই অবস্থায় যদি আপনার পরিপূর্ণ ঘুম এসে যায় তাহলে মনে রাখতে হবে নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় অজু করে নামাজে দাঁড়াতে পারে।
৬. নামাজের উচ্চস্বরে হাসা
নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসিলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যায়। কারণে-অকারণে যেভাবেই হোক নামাজে যদি কেউ হাসি দেয়, হাসাহাসি করে তাহলে তার ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর মনে রাখতে হবে অজু যদি নষ্ট হয়ে যায় আপনি কষ্ট করে নামাজে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লেন কিন্তু নামাজ হলো না। কারণ ওযু নামাজের চাবি আর নামাজ বেহেস্তের চাবি।
৭. পাগল, মাতাল ও অচেতন হইলে/জ্ঞান হারিয়ে যাওয়া
বেহুশ, পাগল বা মাতাল হওয়া কিংবা কোন ওষুধ সেবনের ফলে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ওযু ভঙ্গ হইয়া যায়। মস্তিষ্কের বিকৃতি কিংবা চেতনা হারিয়ে গেলেও অজু ভঙ্গ হয়ে যায়। (তিরমিযী: ৯৬; মুগনী- ১/২৩৪)
আজ আমরা আলোচনা করেছি মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ সম্পর্কে। অনেকেই ইন্টারনেটে মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ কি কি লিখে প্রশ্ন করে থাকেন। আসলে পুরুষ এবং মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ একই। পুরুষ এবং মহিলাদের ওযু ভঙ্গের কারণ কি কি সে সম্পর্কে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি আজকের পোস্ট টি দেখার পর ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহ আপনি মনে রাখতে পারবেন।