Breaking News
Home / Education / অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ

আজ আমরা আলোচনা করব অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ নিয়ে। অনেকেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে জানতে চেয়ে গুগোল এ সার্চ করে থাকবে।  নিশ্চয়ই আমাদের এই পোস্টটি গুগলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ লিখে সার্চ করে পেয়েছেন।  আপনি যদি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে জানতে চান তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনাকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। 

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ

সাধারণত আমরা কোন অসুখে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত  অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করে থাকে।  তাৎক্ষণিকভাবে আমরা কি অসুখ থেকে মুক্তি পেলেও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার ফলে আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ জানার আগে চলুন জেনে নেই  অ্যান্টিবায়োটিক কি? 

অ্যান্টিবায়োটিক কি?

অ্যান্টিবায়োটিক এমন একটি উপাদান যেটি ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস থেকে সংগ্রহ করা হয় অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস কে ধ্বংস করার জন্য এবং তার বংশ বৃদ্ধি রোধ করতে ব্যবহার করা হয় অ্যান্টিবায়োটিক। 

ব্যাকটেরিয়া  নিজেরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে না। নিজেদের অঞ্চল থেকেই  খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়। এ জন্য তারা একই অঞ্চলে থাকা অন্য ব্যাকটেরিয়া গুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে থাকে। একটি ব্যাকটেরিয়া অন্য আরেকটি ব্যাকটেরিয়াকে মারার জন্য এন্টিবায়োটিক তৈরি করে থাকে।  এই অ্যান্টিবায়োটিকই আমরা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করি। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ফলে যদি আমাদের অসুস্থতা দূর হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ কেন রয়েছে? এই প্রশ্নটিই অনেকেই করে থাকেন।  অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ফলে যেমন সুফল পাওয়া যায়, তেমনি করে অতিরিক্ত সেবনেও কিছু অসুবিধা হতে পারে। চলুন এবার জেনে নেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহগুলো কি কি।

ওজন বেড়ে যাওয়া

 অনেক গবেষণা থেকে জানা যায়, ডেইরি ফার্মের পশুদেরকে মোটা তাজা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করানো হয়ে থাকে।  এই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ মানুষের শরীরে ও একই ধরনের প্রভাব বিস্তার করে।  এজন্য অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত সেবনের ফলে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যায়।

টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর আশঙ্কা

যদিও অ্যান্টিবায়োটিক শরীরের অনেক ক্ষতিকর জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু অল্প বয়সে অনেক বেশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে ভবিষ্যতে তাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

শরীর থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে

শরীরে এমন অনেক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেগুলো মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তার মধ্যে অন্যতম ‘এইচ পাইলোরি’ ব্যাকটেরিয়া। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের উচ্চমাত্রার ডোজে ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে শরীরে তৈরি হতে দেখা যায় হাঁপানি রোগ। 

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়

অতিরিক্ত মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। অ্যান্টিবায়োটিক অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করার কারণে একটি সময় আমাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে, তখন আর কোন অ্যান্টিবায়োটিকই আর কাজ করে না। শরীরে কোন ইনফেকশন হলে সহজে শুকায় না। 

এই প্রসঙ্গে হলি ফ্যামিলি কলেজ এবং হাসপাতালের নাক, কান, গলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন,  সাধারণত ভাইরাল ইনফেকশন গুলোর মধ্যে যেমন সর্দিকাশি- এসবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা ঠিক নয়।  কিন্তু ইনফেকশন বা সংক্রমণ দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে গেলে তখন দেওয়া যেতে পারে। এন্টিবায়োটিক এর মূল উদ্দেশ্য থাকে শরীর থেকে রোগের জীবাণু একদম মেরে ফেলা।

 ডাক্তার মোহাম্মদ জাকারিয়া আরও বলেন, একজন চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বুঝে পাঁচ থেকে সাত দিনের একটা কোর্স নিয়ে থাকেন। তবে যদি  কেউ এই সময়ের পূর্বে, আনুমানিক দুইদিন ওষুধ খেয়ে আর খেলো না, তখন ওই এন্টিবায়োটিক রোগীর শরীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে ঐ রোগীর শরীরে থাকা আগের চেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দরকার হয়ে পড়ে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি ক্ষতিকর দিক। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ জানার পাশাপাশি এর থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবো। চলুন আরও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ দেখে নেই।

স্থুলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়

এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শারীরিক  স্থুলতার ঝুঁকি দেখা যায়।

পেটের প্রদাহ

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি পেটের প্রদাহ। দীর্ঘস্থায়ী এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে অন্ত্রের প্রাচীরে ঘা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

লিভারের ক্ষতিসাধন

লিভারের ক্ষতি সাধনের জন্য অন্যান্য সকল ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে বেশি দায়ী।

অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক এর জন্য দায়ী

অ্যান্টিবায়োটিক এজমা থেকে রক্ষাকারি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ফেলা জমা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়ে যায়। 

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রতিকারের উপায়

অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ তো আমরা জানতে পারলাম। এবার আমাদের জানা দরকার কিভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে পারি। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রতিকার করার উপায় সম্পর্কে বলতে চলেছি। চলুন জেনে নেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রতিকারের উপায়

১) যে কোন সাধারণ রোগে আক্রান্ত হলেই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না;

অনেকেই সাধারণ  সর্দিকাশি,  জ্বর কিংবা ঠান্ডা লাগবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকে। না, এমনটি মোটেও করা যাবে না। এমনটি করলে আপনি নিজের অজান্তেই নিজের জন্য ক্ষতি ডেকে আনবেন। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রতিকারের উপায় হিসেবে এটি মেনে চলতে হবে।

২) ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ ও সময় অনুসারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে;

অনেকেই এই ভুলটি করে থাকেন।  রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ডাক্তার ৭ দিনের ওষুধ দিলে  আমরা দুই দিনের ওষুধ খেয়ে বসে থাকি।  এমনটি করলে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রতিকার করতে পারবো না।  অবশ্যই আমাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ডোজ এবং  সময় অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।

৩)  ব্যবস্থাপত্র দেওয়া ওষুধ গুলো কোনটি কিসের জন্য;

ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে দেওয়া ওষুধ গুলোর ব্যাপারে ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞাসা করুন। ব্যবস্থাপত্র দেওয়া ওষুধগুলো কোনটি কোন কারনে দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে রাখুন।

৪)  মেয়াদোত্তীর্ণ এন্টিবায়োটিক সেবন না করা;

ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কেনার সময় সতর্ক থাকবেন মেয়াদোত্তীর্ণ এন্টিবায়োটিক নেওয়া থেকে। অনেক সময় ফার্মাসিস্ট দের কাছে পূর্বের ওষুধ থাকে ফলে তারা মেয়াদ চেক না করেই রোগীকে দিয়ে দেয়। এতে করে রোগ প্রতিরোধ হওয়ার বদলে উল্টে ক্ষতিকর দিকে নিয়ে যায়। 

আমাদের আজকের আলোচনার ছিল অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ গুলো এবং অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ প্রতিকারের উপায় নিয়ে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দৈনন্দিন জীবনে বেশি বেশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে।  যারা বেশি বেশি এন্টিবায়োটিক খেয়ে থাকেন তাদের জন্য অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ পোষ্টটি পড়ে নেওয়া উচিত। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের ক্ষতিকর দিকসমূহ এই পোস্টের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।  আপনার কোন প্রয়োজন অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকলে অবশ্যই তার সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করবেন যাতে করে সে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারে এবং এর থেকে প্রতিকার নিতে পারে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *