Breaking News
Home / Education / আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা

আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা যা গ্রহণ করি তাই খাদ্য তবে শুধু খাবার গ্রহণনের মাধ্যমেই সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। যদি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে তবে খাবার গ্রহণ করে কোন উপকার হয়না বরং ক্ষতি হয়। কেননা  আমরা সবাই জানি অধিক মাত্রায় খাবার গ্রহণ শরীরের জন্য কতটা খারাপ। তাই আমাদের সকলের উচিত দৈনন্দিন জীবনের সঠিক খাবার গ্রহণ করা যার মধ্যে শর্করা আমিষ ও খনিজ পদার্থগুলো পরিপূর্ণ থাকে যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি জরুরী। 

স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সুস্থ পরিবার

স্বাস্থ্য সচেতন ও সুস্থ পরিবার পেতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের নিজেদেরকে সচেতন হতে হবে। সুস্থ পরিবার একটি নেয়ামত স্বরূপ। কোন পরিবারে যদি একজন মানুষ অসুস্থ থাকে, তাহলে আমরা একটু খেয়াল করলে দেখব সম্পূর্ণ পরিবারটি যেন অসুস্থতার রূপ নেয়। আসলে সম্পূর্ণ পরিবারটি যে অসুস্থ ব্যাপারটা তা নয় সম্পূর্ণ পরিবারটি সে অসুস্থ মানুষের জন্য ভোগান্তি পোহাতে থাকে।
প্রতিদিন ছোট ছোট সঠিক অভ্যাস গুলো যদি আমরা চর্চা করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা সকলে সুস্থ থাকতে পারবো এবং সাথে আমাদের পরিবার। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক, কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যকথা রয়েছে যেগুলো মানলে অবশ্যই আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং সুস্থ পরিবার পেতে পারেন। ঘন দুধের সর এবং দুধ দুটোই এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এটি হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। 
  • চামড়া ও মাছের পিঠে দুটো কি এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • তেলের খাবার অথবা তেল যতটা কম খাবেন নিজেকে এবং হার্টক ততটা ভালো রাখতে পারবেন। 
  • চর্বি এবং লাল মাংস থেকে যতটা দূরে থাকা যায়। এটি স্ট্রোকের কারণ। 
  • চা-তে দুধ আর চিনি শরীরে ক্ষতি ছাড়া কোন উপকারই করে না।
  • যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে তারা রং চা খাওয়ার অভ্যাস করুন, কারণ এতে উপকার রয়েছে। 
  • খুব বেশি গরম চা খাওয়া ঠিক না তাছাড়া খুব বেশি গরম খাবার খাওয়াও ঠিক না এতে পেটের ক্ষতি হয়। 
  • প্রতিদিন অল্প একটু পরিমাণ হলেও টক খাওয়া উচিত এতে ব্লাড প্রেসার ঠিক থাকে।
  • যারা ডাইবেটিস এর রোগী রয়েছেন তারা খালি পেটে নিম পাতা খেতে পারেন এতে ডায়াবেটিস কমে যায়।
  • যাদের মুখ থেকে থুতু এনে টাকা গোনার অভ্যাস রয়েছে তারা এটা এখনই পরিত্যাগ করুন কারণ এতে শরীরের রোগ বীজ বুনে। 
  • প্রাণ খুলে হাসার অভ্যেস করুন এতে মন ভালো থাকে।
  • আমাদের সকলের উচিত রোগ ব্যাধি সম্পর্কে জানা এবং এগুলো মেনে চলা এতে করে আমরা নিজেরাও সুস্থ থাকবে এবং পরিবারকে সুস্বাস্থ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। 

দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকা

পুষ্টিকর খাবার বলতে আমরা এক কথায় বুঝি, যে খাবারের ফলে আমাদের শরীর সুস্থ সবল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় তাকে আমরা পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ধরে নিতে পারি। যদি আমরা ফলের কথা চিন্তা করি যেমন ধরুন,
আপেল : আপেলের প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন সি থাকে তাছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। 
কমলা : সুপরিচিত এবং সুস্বাদু ফল হিসেবে কমলা অতুলনীয় কমলার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। 
ডিম : প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ হচ্ছে ডিম। 
মাংস : কম রান্না করা মাংস শরীরের জন্য একটি পুষ্টিকর খাদ্য। 
মুরগির মাংস : প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ। যারা মোটাতাজা হতে চান তারা অবশ্যই মুরগির মাংস খেতে পারেন এতে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে। 
দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় আমাদের কিছু ভাল খাবারের উৎসের প্রয়োজন রয়েছে। 

সোডিয়াম ও ক্লোরাইড

কাজ : আমরা সকলেই জানি আমাদের শরীরে পানির কি প্রয়োজন। তাছাড়া পানির অপর নাম জীবন। সোডিয়াম ও ক্লোরাইড শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে যার। যা আমাদের অভন্তরীন পেশী এবং স্নায়ু কার্যক্রমে কোনরকম ব্যাঘাত ঘটছে দেয় না। 
উৎস : লবন ও কিছু কিছু সবজিতে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। 

পটাশিয়াম

কাজ : পটাশিয়াম ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পেশী ও স্নায়ুর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে 
উৎস : তরতাজা ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে তাছাড়া দুধ ও স্বচ্ছতা ও পটাশিয়াম পাওয়া যায়। 

ক্যালসিয়াম 

কাজ : পেশী সংকোচন হাড় ও দাঁতের সুস্থতা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ক্যালসিয়াম এর ভূমিকা অপরিসীম 
উৎস : সরিষা শাক, কাঁটাসহ মাছ দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য গুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম রয়েছে। 

ম্যাগনেসিয়াম 

কাজ : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্নায়ু কার্যক্রম এবং আমিষ গঠনে ম্যাগনেসিয়াম অতুলনীয়। 
উৎস : সবুজ পাতার যত ধরনের শাকসবজি রয়েছে এবং বাদাম ও বীজ জাতীয় শস্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। 

ফসফরাস 

কাজ : হাড় ও দাঁতের গঠনে ফসফরাসের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । 
উৎস : মাছ মাংস ডিম ও দুধে অধিক পরিমাণে ফসফরাস রয়েছে। 

লৌহ 

কাজ : লৌহের প্রধান কাজ রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং রক্তকণিকাকে সঠিকভাবে গঠন করা। 
উৎস : রঙিন শাকসবজ,  ডিমের কুসুম, শুকনো ফল,  মাংস এবং কলিজাতে প্রচুর পরিমাণ লৌহ থাকে। 

জিংক

কাজ : বৃদ্ধি ও বিকাশ,  রোগ প্রতিরোধে এবং বিপাক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণে জিংক অতুলনীয় ভূমিকা পালন করে। 
উৎস : মাছ-মাংস, গোটা শস্য  এবং সবজিতে জিংক থাকে। 

আয়োডিন 

কাজ : আয়োডিন থাইরয়েড হরমোন তৈরি করে। 
উৎস : আয়োডিনযুক্ত লবন,  সামুদ্রিক মাছ এবং কিছু কিছু শাক সবজি এর উৎস। 
পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা বলতে শুধু মাছ-মাংস,ডিম,দুধ এগুলো বুঝায় না। এগুলো ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বীজ জাতীয় খাবার। যেমন: বাদাম, চিয়া সিড, নারিকেল, আখরোট,  এছাড়াও শাকসবজি, গাজর, ফুলকপি, সরষে, রসুন, পেঁয়াজ, টমেটো, ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে নানান রকমের পুষ্টিগুণ। তাই আমাদের উচিত সুষম খাদ্য এবং সুস্থ থাকার জন্য ভালো খাবার গ্রহণ করা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা।

খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা 

বেঁচে থাকার জন্য আমরা যা গ্রহণ করি তাই হচ্ছে খাদ্য। আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক, তবে দেহ বৃদ্ধি এবং শক্তি আমাদের প্রয়োজন। যা খাদ্য উপাদান হিসেবে সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে। আমাদের সকলের জানা উচিত খাদ্যের মধ্যে শর্করা খনিজ পদার্থ, আমিষ, এবং জৈব যৌগ যা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি তা যেন, আমাদের শরীরকে কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করে।

পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা : (Nutritional requirements)

মস্তিষ্ক বিকাশের অন্যতম উৎস হচ্ছে পুষ্টিকর খাদ্য। সহজ লভ্য অনেক খাবারে উচ্চামানের পুষ্টি পাওয়া যায়। পুষ্টিকর খাবার না গ্রহন করলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগে। যার ফলে শরীর শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বলতা অনুভব করা, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া,  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। অথচ, যদি সাধারণ খাবার থেকে আমারা পুষ্টি পরিমিত পরিমানে গ্রহণ করতে পারি তাহলে এই নানা ধরনের রোগের সম্মুখীন হতে হবে না। শাক-সবজি, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি খাবার এই পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টি গুণ রয়েছে। 

মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দরকার ৫ ধরনের খাবার

আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক, সুষম খাদ্যের অপর নাম সুস্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্য পেতে চাইলে দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় ৫ ধরনের খাবার অবশ্যই রাখতে হবে।  এর মধ্যে রয়েছে  শস্য জাতীয় খাবার যেমন : আটা,চাল,  ভূট্টা।
  • প্রোটিন জাতীয় : ডাল, ডিম, মাছ এবং মাংস।
  • শাক-সবজি ও বিভিন্ন ধরনের ফল। 
  • ঘি, চর্বি ও তেল।  চর্বি ও তেল পরিমাণ এর অধিক নেওয়া যাবে না। 
  • এই ৫ ধরনের খাবার শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। 
  • স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আয়রন ও খনিজ লবণ

আয়রন 

আমরা হয়তো অনেকেই জানি শরীরের জন্য আয়রন অনেক জরুরী।  কতটা জরুরী তা কি কখনও ভেবে দেখেছি। হিমোগ্লোবিন নামের সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত,  কিন্তু জানি না এর কাজ কি কিংবা কেন এর পরিমান শরীর থেকে কমে যায়। আসলে হিমোগ্লোবিন একটি রক্তের উপাদান যা কমে গেলে রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। যা আয়রনের ঘাটতির ফলে সংঘটিত হয়। শরীরের আয়রনের কমে গেলে ফুসফুস সঠিক মাত্রায় অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেনা। শরীরে নানা ধরনের রোগের সংক্রমণ দেখা দেয় আয়রনের অভাবে। যেমন : শ্বাসকষ্ট, চোখ হলুদ,ক্ষুধামন্দা, মাথা ঘুরানো, শরীরেদুর্বলতা ইত্যাদি। 
আয়রন ভারপুর খাবার : টমেটো, গাজর,  মটরশুটি পালংশাক, ডিম, মাছ, কলিজা, আম, কলা, আলু সহ কিছু শুকনো ফল যেমন: খেজুর, বাদাম, কাজু বাদাম ইত্যাদি। 

খনিজ লবণ 

আয়োডিন/ খনিজ লবন আমাদে শারীরিক বৃদ্ধি ও হাড় গঠন এ সরাসরি ভূমিকা পালন করে থাকে। অথচ আমার এই খনিজ লবনের বিষয়ে উদাসীন। থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব পরে এই খনিজ লবনের অভাবে।
এক কথা সুস্থ থাকার জন্য আমারে আয়োডিন প্রয়োজন।  আমার একটু খেয়াল করলেই দেখবো বাজারে যত লবন রয়েছে তার গায়ে লেখা থাকে আয়োডিন যুক্ত। যদি দরকারি না হতো তাহলে আয়োডিনের কথা উল্লেখ করা হতোনা। বিশেষভাবে গর্ভবতী নারীদের জন্য আয়োডিন খুবই প্রয়োজনীয়।
খনিজ লবন ভারপুর খাবার : দুধ, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ টুনা, সিদ্ধ ডিম, টকদই, কলা স্ট্রবেরি  ইত্যাদি। 

কোন বয়সে পুষ্টির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি

খাদ্য ছাড়া মানুষ বাঁচে না তবে আমাদের সকলের জেনে রাখা উচিত ১৩ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক, পরিমিত পরিমাণে সুষম খাদ্য এবং সঠিক খাবারের তালিকা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা উচিত। এই বয়সে ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক নানা পরিবর্তন ঘটে। 
এই সময় সঠিক মাত্রায় পরিমিত পরিমানে খাবার গ্রহণ করা উচিত।  এই বয়সে প্রচুর পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং ভিটামিন যক্ত খাবার তালিকায় রাখা আবশ্যকীয়। ১৩-১৯ এই বয়স কে টিন এজার বলা হয়। এই সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন দেহ বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্য  সঠিক ভাবে বিকাশিত হয় খাবারকে কেন্দ্র করে। তাই এই সময় পুষ্টিক্র খাবারের বিকল্প শুধু পুষ্টিক্র খাবারই। এই বয়স কাল কে গুরুত্ব দেয়া উচিত। 

শেষ কথা

আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অনেক যা আমরা জানি তবে সঠিক ভাবে মানার চেষ্টা করিনা । আমাদের সকলের উচিৎ নিজের প্রতি খেয়াল রাখা । 
এমন আর গুরুত্ব পূর্ণ টিপস পেতে আমাদের সাথে থাকুন এবং কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানান । আমরা আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *