Breaking News
Home / Islamic / শবে কদর নামাজের নিয়ত – শবে কদর নামাজের নিয়ম

শবে কদর নামাজের নিয়ত – শবে কদর নামাজের নিয়ম

আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আজ আমরা আলোচনা করব শবে কদর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে। আমরা অনেকেই জানিনা কিভাবে শবে কদরের নামাজের নিয়ত করতে হয়। নেক নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। সেখানে শবে কদরের মত একটি উত্তম এবং পবিত্র রাতের ইবাদত আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শবে কদর নামাজের নিয়ত এর পাশাপাশি শবে কদর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানাবো। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে শবে কদর নামাজের নিয়ত করবেন এবং শবে কদর নামাজের নিয়ম। 

শবে কদর নামাজের নিয়ত - শবে কদর নামাজের নিয়ম

পবিত্র রমজান মাসের শ্রেষ্ঠ ও সর্বোচ্চ সম্মানিত রাত শবে কদর রাত। বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন  শবে কদরের রাতের ইবাদত ১০০০ বছরের ইবাদতের সমান। এত মর্যাদাপূর্ণ একটি রাতের ইবাদত আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা শবে কদর নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়।  এজন্য অনেকে জানতে চান শবে কদরের নামাজের নিয়ত করার নিয়ম সম্পর্কে।  সারা বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মহামান্বিত এই সবে কদর রাতে আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত।  তবে তার আগে প্রয়োজন শবে কদর নামাজের নিয়ত করার নিয়ম জানা। 

লায়লাতুল অর্থ রাত/রজনি এবং কদর অর্থ ভাগ্য/তকদীর। এক কথায় লায়লাতুল কদর অর্থ তকদিরে রাত বা ভাগ্য রজনী। এছাড়া এর অন্য অর্থ দাঁড়ায়- ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। পবিত্র এই রাতে বান্দার ইবাদত-বন্দেগিতে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সব দেওয়া হয়।  মুসলমানদের জন্য শবে কদরের রাত বা লাইলাতুল কদর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকত ময় মহিমান্বিত একটি রাত।  মহান আল্লাহ তায়ালা  পবিত্র কুরআন মাজীদে “ সূরা কদর” নামে একটি সূরা নাযিল করেছেন। “ সূরা কদর’-এ  মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- “ নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাযিল করেছি কদর ( মর্যাদাপূর্ণ) রজনীতে।  আপনি কি জানেন মহিমান্বিত কদর রজনী কি?  মহিমান্বিত রজনী হচ্ছে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনী।  সে রাতে ফেরেশতাগণ হযরত জিবরাঈল (আঃ)  সমভিব্যাহারে  অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও  অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এ শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষার উদয় পর্যন্ত।” (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)।

আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস

শবে কদর সম্পর্কে হাদীস শরীফেও রয়েছে অসংখ্য বর্ণনা। শবে কদরের রাতেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর উপর মহান আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম পবিত্র কুরআন নাযিল করেন।  পবিত্র কোরআন নাযিল হওয়া এ আটকে পড়েছে আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। শবে কদর রাতে জিবরাইল ফেরেশতা পৃথিবীতে অবতরণ করে ইবাদত রত সব মানুষের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেন।  হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,  শবে কদরে হযরত জিব্রাইল (আঃ)  ফেরেশতাদের বিরাট একটি দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজ রত অবস্থায় জিকিরে মশগুল থাকে তাদের জন্য রহমতের দোয়া করতে থাকেন। ( মাজহারী)

শবে কদর নামাজের নিয়ত কিভাবে করবেন

অনেকেই প্রশ্ন করেন শবে কদর নামাজের নিয়ত কিভাবে করব? নিয়ত মানে মুখে উচ্চারণ করা নয়। “আমি এখন কেবলা মুখী হয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করব”  এই কথাটি নিজের মতো করে মনে মনে সংকল্প করলেই বা ইচ্ছা করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। শবে কদর নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হবে  না। শবে কদর নামাজের নিয়ত হিসেবে নিচের নিয়মটি অনেকেই পড়ে থাকেন।  এটি সঠিক শবে কদর নামাজের নিয়ত নয়। 

শবে কদর নামাজের নিয়ত - শবে কদর নামাজের নিয়ম

স্বাভাবিকভাবে আমরা  ফরজ নামাজ গুলোর ক্ষেত্রে যেভাবে নিয়ত করে থাকি শবে কদর নামাজের নিয়ত একই রকম করতে হবে।  অর্থাৎ শবে কদর নামাজের নিয়ত হবে মনে মনে। শুধু শবে কদর নামাজের নিয়ত নয় দিনের বাকি ফরজ নামাজ গুলো এবং অন্যান্য সুন্নত নামাজের ক্ষেত্রেও মুখে নিয়ত করার  বৈধতা পাওয়া যায় না।  কোন কিছু করার চিন্তা মাথায় আসার পর সে ঠিক করার জন্য মনে মনে সংকল্প করায় নিহতের জন্য যথেষ্ট।  অর্থাৎ আপনি যখন শবে কদর নামাজের জন্য দাঁড়াবেন মনে মনে সংকল্প করবেন “ কেবলামুখী হয়ে দু’রাকা’আত নফল সালাত আদায়ের নিয়ত করলাম” এতটুকু মনে মনে চিন্তা করলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। 

আরও পড়ুনঃ শবে কদরের দোয়া

শবে কদর কবে – শবে কদরের নামাজ কবে

যারা জানতে চান শবে কদর কবে শবে কদরের নামাজ কবে হবে, তাদেরকে বলে রাখি শবে কদর কবে  হবে সঠিক জানা যায়নি। আমাদের সমাজে সাতাশে রাত বা ২৭ রমজানের  রাতকে শবে কদরের রাত হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ২৭ রমজান শবে কদর এর নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। 

** মহানবী রাসুল (সাঃ)  বলেছেন-  কেউ যদি লাইলাতুল কদর বা শবে কদর খুঁজতে চায় তাহলে সে যেন জমাদানের শেষ ১০ রাত্রে লাইলাতুল কদর খোঁজ করে। ( মুসলিম, হাদিস নং- ৮২৩) এজন্য আমাদের উচিত রামাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় (২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯) তম রাতগুলো বেশি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতের সাথে কাটানো। 

শবে কদরের নামাজ কবে এই প্রশ্ন জাতির ছিল আশা করি তারা উত্তর পেয়ে গেছেন। শবে কদর কবে এর উত্তর হচ্ছে  রামাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় (২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯) তম রাতগুলোর কোন এক রাত। শবে কদর সম্পর্কে হাদিস গুলো পড়লে দেখতে পাবো প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) লাইলাতুল কদরের এই সম্মানিত বা মহিমান্বিত রাতটি রমজান মাসের শেষ ১০দিন খুঁজতে বলেছেন। শবে কদর সম্পর্কে হাদিস অনুসন্ধান করলে এটাও দেখতে পাবো। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফে বসতেন। যাতে কোনভাবেই মহিমান্বিত এই লাইলাতুল কদরের রাত থেকে বঞ্ছিত না হয়। এই পবিত্র রাতে বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এজন্য।

শবে কদর নামাজের নিয়ম – শবে কদর নামাজ কত রাকাত

শবে কদর রাত আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত।** ইবনে মাজাহ শরীফে উল্লেখ্য আছে, মহানবী রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন-  “যে লোক লাইলাতুল কদর থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল, সে যেন সমস্ত কল্যাণ হতে পরিপূর্ন বঞ্চিত হয়ে গেল” । শবে কদর রাত আমাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা অনেকেই জানিনা শবে কদর নামাজের নিয়ম। অনেকেই প্রশ্ন করেন শবে কদর নামাজ কত রাকাত।   এ প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলঃ-

আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের দোয়া

 শবে কদর নামাজের নিয়ম:- 

অন্যান্য সময়গুলোতে আমরা যেভাবেনামাজ পড়ি শবে কদর রাতেও সেভাবেই নামাজ পড়তে পারবো। 

(১) তাকবীরে তাহরীমা দেওয়ার পর

(২)  সানা পড়বো

(৩)  আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ  সূরা ফাতেহা পড়বো।

(৪)  বিসমিল্লাহ সহ  যে কোন সূরা পড়তে পারি।  এখানে সূরা কদর বা সূরা এখলাছ পড়তে হবে এটা নির্দিষ্ট নয়। আপনি যে কোন সূরা পড়তে পারেন। যদি বড় কেরাত পড়তে চাই তাহলে বড় কেরাত পড়তে পারি। 

(৫) রুকুতে যাবো

(৬) তারপর সেজদায় যাবো। (২ সেজদা) 

(৭) ২ সেজদা দেওয়ার পর আবার আমি আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ বলে সুরা ফাতেহা পড়বো।

(৮) এরপর বিসমিল্লাহ সহ যেকোন সূরা মিলিয়ে পড়বো।  তবে এখানে খেয়াল রাখবেন প্রথম রাকাতে একটু বড় সূরা পড়বেন এবং দ্বিতীয় রাকাতে অপেক্ষাকৃত একটু ছোট সূরা করবেন।

(৯) এরপর দু’রাকাত শেষ করার পর।  তাশাহুদে বসবেন। তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন।  এভাবেই আপনার দুই রাকাত নামাজ সম্পূর্ণ হবে। 

আরও পড়ুনঃ বিতর নামাজের নিয়ত করার নিয়ম

এভাবেই দু’রাকাত দু রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে থাকবেন। আপনার ধৈর্য অনুযায়ী আপনি যতোটুকু সম্ভব শবে কদর রাতে এইভাবে নামাজ পড়বেন। আপনার ধৈর্য অনুযায়ী আপনি যতোটুকু সম্ভব শবে কদর রাতে এইভাবে নামাজ পড়তে পারেন।  আপনি চাইলে  দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন, ১০,১২,২০,৩০ রাকাত বা তারচেয়েও বেশি পড়তে পারেন। আপনার ধৈর্য অনুযায়ী আপনি শবে কদরের রাতে এইভাবে নামাজ পড়বেন। শবে কদর নামাজ কত রাকাত বা শবে কদর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানো হয়েছে। আশা করি এই বিষয়ে আর সমস্যা হবে না। 

শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত – শবে কদরের নামাজ সুন্নত নাকি নফল

আমরা অনেকেই শবে কদরের নামাজ নফল না সুন্নত এ বিষয়ে অবগত নয়। ইতিমধ্যেই  শবে কদর নামাজের নিয়ম এর মধ্যে উল্লেখ করেছি শবে কদরের নামাজ সুন্নত নাকি নফল।  শবে কদরের নামাজ নফল ইবাদত। নফল ইবাদত আপনি যত খুশি করতে পারেন।  এজন্য  শবে কদর রাতে দু’রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়ার পাশাপাশি, কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির-আজগার সহ অন্যান্য নফল ইবাদত গুলো করতে পারেন। 

  আজকের পোষ্টে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি শবে কদর নামাজের নিয়ত ও শবে কদর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। এছাড়া এর পাশাপাশি  আপনাদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর জানানো হয়েছে।  যেমনঃ শবে কদর কবে,  শবে কদরের নামাজ হবে,  শবে কদর নামাজ কত রাকাত ও শবে কদরের নামাজ সুন্নত নাকি নফল। পোস্টটি আপনার উপকারে আসলে একটি কমেন্ট করে যাবেন এবং আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারেন। ধন্যবাদ।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *