আজ আমরা জানাবো বিতর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে। আপনি যদি বিতর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আমাদের আজকের পোস্টটি সাজানো হয়েছে বিতর নামাজের নিয়ত নিয়ে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিতর নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয়।
আপনি যদি বিতর নামাজ পড়েন কিন্তু বিতর নামাজের নিয়ত জানেন না। যদি বিষয়টি এমন হয় তাহলে খুবই দুঃখজনক। নেক নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদত/আমল কবুল হবে না। এক্ষেত্রে বিতর নামাজ পড়ার জন্য অবশ্যই আমাদের বিতর নামাজের নিয়ত করতে হবে। বিতর নামাজের নিয়ত বলতে নির্দিষ্ট কোন বিতর নামাজের নিয়ত নেই। অনেকে হয়তো বিতর নামাজের নিয়ত আরবিতে মুখস্থ করে এবং আরবিতে বিতর নামাজের নিয়ত করে থাকে। শুধু বিতর নামাজের নিয়ত নয়, ইসলামে নিয়তের ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা, নিয়ত ছাড়া কোন আমল কবুল হবে না। এজন্য কোন নেক কাজ বা আমল সহ সকল ইবাদতের পূর্বে আমাদের নিয়ত করে নিতে হবে। এই পোস্ট আপনাদের বিতর নামাজের নিয়ত সহ নিয়ত করার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
বিতর (وتر) শব্দটি একটি আরবি শব্দ। বিতর শব্দের অর্থ বিজোড়। এই নামাজ ৩ রাকাত হওয়ায় এটিকে বিতর নামাজ বলা হয়। অনেকেই বিতর নামাজ ১ রাকাতও পড়ে থাকেন। কেননা নামাজে ১ রাকাত যোগ না করলে কোন নামাজি বিজোড় হয় না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রাতের নফল সালাত দুই দুই, অতঃপর যখন তোমাদের কেউ ফজর হয়ে যাবার আশংকা করবে, তখন যেন সে ১(এক) রাকাত পড়ে নেয়; যা তার পূর্বের সকল নফল সালাতকে বিতর নামাজে পরিণত করবে।
(বুখারী হা/৯৯০; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২৫৪)
নিয়ত (نية) হচ্ছে আরবি শব্দ। নিয়তের অর্থ হচ্ছে ইচ্ছা বা সংকল্প। এই ইচ্ছা বা সংকল্প করার স্থান হচ্ছে অন্তরে। কোন ইচ্ছা বা সংকল্প মুখে উচ্চারণ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। মনে মনে দৃঢ় ইচ্ছা বা সংকল্প করাই হচ্ছে নিয়ত।
বিতর নামাজের নিয়ত করতে হয় বিতর নামাজ শুরু করার আগে। যেকোনো নিয়তই করার নিয়ম ওই ইবাদত বা কাজ শুরুর আগে। বিতর নামাজের নিয়ত ও তার বিপরীত নয়। তবে আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। সেটি হল বিতর নামাজের নিয়ত আরবিতে পড়া। বিতর নামাজের নিয়ত হিসেবে উপরের ছবিতে দেওয়া আরবি লেখাগুলো আমাদের অনেকেই বিতর নামাজের নিয়ত হিসেবে পড়ে থাকেন। সত্যি বলতে এটা সঠিক বিতর নামাজের নিয়ত নয়। বিতর নামাজের নিয়ত করার সময় মুখে আরবিতে উচ্চারণ করে বিতর নামাজের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। আমি আজ আপনাদের শিখিয়ে দিব কিভাবে বিতর নামাজের নিয়ত করবেন।
বিতর নামাজের নিয়ত – এশার ৩ রাকাত বিতর নামাজের নিয়ত
“আমি এখন ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করবো।”
“আমি এখন ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করবো।”
অন্তরে একটুকু সংকল্প করলেই বিতর নামাজের নিয়ত এর জন্য যথেষ্ট হবে। বিতর নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। এতটুকু কথা নিজে মনে মনে ধারণা করলেই এশার ৩ রাকাত বিতর নামাজের নিয়ত হয়ে যাবে। রেফারেন্স হিসেবে পোস্টের নিচে একটি ভিডিও দেওয়া হয়েছে, চাইলে দেখে নিতে পারেন। আশা করছি বিতর নামাজের নিয়ত বা এশার ৩ রাকাত বিতর নামাজের নিয়ত এর জন্য ভিডিওটি যথেষ্ট হবে।
আমরা জানি, বিতর নামাজ অর্থ বিজোড় নামাজ। বিতর নামাজ ১ রাকাত/ ৩ রাকাত দুই ভাবেই পড়া যায়। আপনি যেই কয় রাকাত বিতর নামাজ পড়তে চান বিতর নামাজের নিয়ত এর মধ্যে এই কয় রাকাত উল্লেখ করবেন। আমি আবারও বলছি বিতর নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। বাংলা নিজের মতো করে অন্তরে পরিকল্পনা বা সংকল্প করলেই হবে। বিতর নামাজের নিয়ত আরবিতে বলার প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুনঃ বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
আমরা অনেকেই নিয়ত পড়ে থাকি। নিয়ত আসলে পড়তে হয় না নিয়ত করতে হয়। আল্লাহ রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবীরা কোন আমলের ক্ষেত্রে নিয়ত পড়তেন না। তারা নিয়ত করতেন। নিয়ত করতে হয় মনে মনে, মুখে আরবিতে উচ্চারণ করার নিয়ম কোরআন হাদিসের কোথায় উল্লেখ করা নেই। নিয়ত মানেই মনে মনে কোন আমল করার ইচ্ছাকে বোঝানো হয়। বিতর নামাজের নিয়ত ও একই নিয়মে করতে হবে। শুধু বেতর নামাজ নয়, সকল নামাজের নিয়তই একই রকম হবে।
ছোট থেকে আমরা জেনে এসেছি বিতর নামাজের নিয়ত সহ সকল নামাজের নিয়ত করতে হয় আরবিতে মুখে উচ্চারণ করে। যারা মক্তবে পড়েছেন ছোট বেলায় তাদের অনেকেই হয়তো এই নিয়ত মুখস্থ বলতে না পাড়ার কারণে মাইর খেয়েছেন। কিন্তু এই নিয়ত আরবিতে মুখে বলার কোন নিয়ম কোরআন হাদিসে নেই। এটি সম্পূর্ণ সুন্নাহ বিরোধী কাজ। আল্লাহ রাসুল (সাঃ) ও সাহাবীরা কোন আমলের ক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করেন নাই।
আরও পড়ুনঃ তারাবির নামাজের দোয়া
বিতর নামাজের নিয়ত সম্পর্কে ধারণা
ঈমান আনার পর ইসলামের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হচ্ছে সালাত বা নামাজ। নামাজকে ইসলামের প্রান বলা হয়। মুমিন এবং কাফেরদের মধ্যে বড় পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামায ছাড়াও নফল নামাজ আদায় করার বিধান ইসলামী শরীয়তে আছে। নামাজের নিয়ত নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তিত থাকি। কেউ কেউ মনে করে থাকি, নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হবে।
অনেকেই বলেন, আমাদের সমাজের মধ্যে যে আরবি নিয়ত প্রচলিত রয়েছে সেটি বলতে হয়। না হলে কমপক্ষে মুখে, “আমি নামাজ পড়ার নিয়ত করছি” এতোটুকুন বলতে হয়।
আরও পড়ুনঃ বিতর নামাজে দোয়া কুনুত বাংলা
এই ধারনাটি ও সঠিক নয়। কারণ নামাজ বা রোজার ক্ষেত্রে মৌখিক নিয়ত করা জরুরি নয়; বরং নামাজ পড়া বা রোজা রাখার ইচ্ছা অন্তরে সংকল্প করাটাই যথেষ্ট। একই ভাবে আমরা যখন বিতর নামাজ আদায় করবো তখন বিতর নামাজের নিয়ত করতে হবে কিন্তু মুখে বাংলা বা আরবিতে নয়। মনে মনে ইচ্ছা বা সংকল্প করলেই হয়ে যাবে। সুতরাং এমন কথা ভাবার কোনো সুযোগ নেই, বিতর নামাজের নিয়ত মুখে না করলে নামাজ হবে না।
একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ তাকে কোন কাজের জন্য বাধ্য করা হয়নি। এমন লোক কোন কাজ করবে এবং সেখানে তাঁকে নিয়ত বা ইচ্ছা রাখতে হবে। নিয়ত ছাড়া কোন আমলই কবুল হয় না। নামাজ গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। তাই নামাজ পড়ার পূর্বে অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সময় ফরজ নামাজের নিয়ত করতে হবে এবং বিতর নামাজ পড়ার সময় বিতর নামাজের নিয়ত করতে হবে।
বিতর নামাজের নিয়ত করার নিয়ম
আজ আমরা আলোচনা করেছি বিতর নামাজের নিয়ত নিয়ে। আপনি যদি জেনে না থাকেন কিভাবে বিতর নামাজের নিয়ত করতে হয়; তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য অনেক উপকার করবে। এই পোস্টে রয়েছে বিতর নামাজের নিয়ত করার নিয়ম। আশা করছি আমরা আপনাকে সঠিক ভাবে বিতর নামাজের নিয়ত করার নিয়ম বোঝাতে পেড়েছি। এমন পোস্ট আরও দেখতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ে দেখুন।