আসসালামু আলাইকুম, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটি ঘরেই ফ্রিজ আছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজের সহযোগী হিসেবে ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকি। ফ্রিজের মাধ্যমে যে কোন খাবারকে বা অন্যকে আমরা সহজে সংরক্ষণ করতে পারি। ফ্রিজ আমাদের খাবার বা অন্যকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে সক্ষম। তবে এর জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক নিয়মে ফ্রিজের যত্ন নেওয়া। এজন্য আপনাদের প্রয়োজনে সুবিধার্থে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানাতে উপস্থিত হয়েছি। খাবার সংরক্ষণ করার জন্য ফ্রিজ ব্যতীত আরো অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। তবে আজ শুধুমাত্র ফ্রিজ নিয়েই আলোচনা করব।
আমাদের খাবারকে সতেজ ও দুর্গন্ধ মুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানতে হবে। ফ্রিজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে আমাদের খাবারও সতেজ এবং পরিচ্ছন্ন থাকবে না। তাই আমাদের জন্য ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরী। ফ্রিজ অপরিষ্কার এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হওয়ার পিছনে বিভিন্ন ধরনের কারণ থাকে। এজন্য উচিত হবে আমাদের নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার রাখা। আমাদের খাবারের গুণগত মান ঠিক রাখতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানতেই হবে। ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি না জানলে আমাদের ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হতে পারে এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আসুন ধীর স্থির ভাবে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানতে থাকি।
ফ্রিজ পরিষ্কার করতে কি কি লাগবে?
-
ব্রাশ – brush
-
ডিটারজেন্ট/ডিশ সোপ – Detergent/Dish Soap
-
নরম স্পঞ্জ – Soft Sponge
-
তোয়ালে – Towel
-
পানি – Water
ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি সমূহ
ফ্রিজ পরিষ্কার করার নিয়মগুলো একটি একটি করে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে। ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি গুলো নিম্নে দেওয়া হল
-
সর্বপ্রথম আমাদেরকে বৃষ্টির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে এবং দরজা খোলা রাখতে হবে। ফলে নিজে নিজেই ফ্রিজ থেকে বরফ গলে যাবে। অতিরিক্ত ভাবে বরফ সরানোর জন্য আপনাকে নতুন কোন কৌশল গ্রহণ করতে হবে না।
-
ফ্রিজে রাখা খাবার বা পণ্য সামগ্রী গুলো বের করে রাখুন। যাতে করে ফ্রিজ পরিষ্কার করতে সুবিধা হবে। এরপর এগুলো একটি বালতিতে রেখে উপর দিয়ে ঢেকে দিন তাহলে বরফ গোলবে না এবং আপনার খাবারগুলো অন্তত ফ্রিজ পরিষ্কার করার আগ পর্যন্ত ভালো থাকবে।
-
ফ্রিজের ড্রয়ার রেক এবং অন্যান্য জিনিসগুলো খুলে তারপর সেগুলো ডিটারজেন্ট মেশানো কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কিছু সময় রেখে দেয়ার পর সেগুলো স্পঞ্জ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এবার তোয়ালে ব্যবহার করে সেগুলো সুন্দর করে মুছে নিন।
-
ডিটারজেন্ট মেশানো পানি দিয়ে ফ্রিজের ভেতরের অংশে স্প্রে করে নিন। স্প্রে করার পর নরম স্পঞ্জ দিয়ে ভালোভাবে ঘষে ঘষে ফ্রিজের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করে নিন।
-
ফ্রিজের কর্নারগুলো পরিষ্কার করতে ব্রাশ ব্যবহার করুন।
-
এবার সম্পূর্ণ ফ্রিজটি তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। ফ্রিজের যে জিনিসগুলো প্রথমে নামিয়ে রেখেছেন ড্রয়ার, রেক ও অন্যান্য জিনিসগুলো তোয়ালে ব্যবহার করে মুছে মুছে আগের জায়গায় রাখুন।
-
এবার সময় এসেছে ফ্রিজে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার। তবে ফ্রিজ পরিষ্কার করার সাথে সাথেই বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে কিছু সময় পর বিদ্যুৎ সংযোগ দিন। তার আগে দেখে নিন ফ্রিজের সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি হিসেবে এই পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে আপনি সুন্দরভাবে ফ্রিজকে পরিষ্কার রাখতে পারবেন। আমাদেরকে ফ্রিজ পরিষ্কার করার সময় বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি মেনে ফ্রিজ পরিস্কার করার সময়। আপনার ফ্রিজ পরিষ্কার করা শেষ হলে সব কিছু ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার পর ফ্রিজ চালু করবেন। অতঃপর যখনই ফ্রিজ অপরিষ্কার হয়ে যাবে তখনই আপনি আমাদের দেওয়া এই ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি গুলো প্রয়োগ করে আপনার ফ্রিজকে পরিষ্কার করতে পারবেন।
ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় কিছু সতর্কতা
ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি গুলো মেনে চলার পাশাপাশি আমাদের ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় বেশ কিছু সতর্কতা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় কিছু সতর্কতা সম্পর্কে জানতে পারবেন ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি এই পোস্টে।
-
ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় প্রথম সতর্কতা ফ্রিজের বিদ্যুৎ লাইন ভালোভাবে বন্ধ করা। ফ্রিজ পরিষ্কার করার পূর্বে অবশ্যই চেক করে নিবেন ফ্রিজ থেকে বিদ্যুতের লাইন সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে কিনা। নয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
-
ফ্রিজ পরিষ্কারের শেষ ধাপে ফ্রিজ থেকে সমস্ত পানি তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন। ফ্রিজ ভিজে থাকা অবস্থায় পেয়েছে কোন কিছু রাখবেন।
-
ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য নরম কাপড় ব্যবহার করবেন। ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি পোস্টে ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য আমরা নরম স্পঞ্জ ব্যবহার করতে বলেছি। খসখসে কাপড় ব্যবহার করবেন না, নয়তো ফ্রিজের বিভিন্ন জায়গায় দাগ পড়তে পারে।
-
সব সময় ফ্রিজ রাখার ক্ষেত্রে দেওয়াল থেকে কিছুটা দূরে রাখবেন। কখনো দেওয়াল ঘেঁষে ফ্রিজ রাখবেন না।
-
ফ্রিজ খোলার পরে ভালো করে লক্ষ্য রাখুন ফ্রিজের ডোর আটকেছে কিনা।
-
ফ্রিজের ভিতরে শাকসবজি রাখার ক্ষেত্রে সেগুলো আঁটি বেঁধে রাখবেন না। বরং শাকসবজির আঁটি খুলে রাখুন। তাহলে শাকসবজি গুলো ভালো থাকবে।
সুতরাং ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি গুলো মানার পাশাপাশি উপরে উল্লেখিত সতর্কতা গুলো অবশ্যই আমাদেরকে মেনে চলতে হবে। তাহলে আমাদের ফ্রিজকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারবো।
ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত
আমাদের বাসা বাড়িতে ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকলেও ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত অনেকেরই অজানা। ফ্রিজের এই পাওয়ার কন্ট্রোলার বা টেম্পারেচার কন্ট্রোলার সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা অনেক সময় এটির পাওয়ার বেশি দিয়ে রাখি। ফলে ফ্রিজে রাখা খাবার বা যে কোন জিনিস নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত আমাদের অবশ্যই জানতে হবে। নয়তো ফ্রিজে রেগুলেটর বাড়ানো থাকলে ফ্রিজ অনেক গরম হয়ে যাবে এবং অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত।
কোনো কোনো ফ্রিজের পাওয়ার টেম্পারেচার ০-৭ পর্যন্ত দেওয়া থাকে আবার কোন কোন ফ্রিজে ০-১২ পর্যন্ত পাওয়ার টেম্পারেচার দেওয়া থাকে। নিম্নে দেওয়া হল কোন সময় ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত।
পরিপূর্ণ ভর্তি ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত
আপনার ফ্রিজটি যদি পরিপূর্ণ অবস্থায় খাবার বা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ভর্তি থাকে। তখন আপনার ফ্রিজের রেগুলেটর ৫-৬/১০-১১ রাখা উচিত। ফ্রিজের পাওয়ার টেম্পারেচার এর কম রাখলে ফ্রিজে রাখা জিনিস নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩ ভাগের ২ ভাগ ভর্তি ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত
যদি আপনার ফ্রিজ তিন ভাগের দুই ভাগ খাবার বা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ভর্তি থাকে। তাহলে ফ্রিজের রেগুলেটর বা পাওয়ার টেম্পারেচার মাঝ বরাবর রাখতে হবে। অর্থাৎ ফ্রিজের রেগুলেটর ৩-৪/৬-৮ এর মাঝে রাখা উচিত।
কম পরিমানে ভর্তি ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত
আপনার ফ্রিজটি যদি কম পরিমানে খাবার বা বিভিন্ন জিনিস দিয়ে ভর্তি থাকে। তখন আপনার ফ্রিজের রেগুলেটর ২-৩/৩-৫ রাখা উচিত। ফ্রিজের পাওয়ার টেম্পারেচার এর বেশি দিয়ে রাখলে শুধু শুধু বেশি বিদ্যুৎ খরচ করতে হবে আপনাকে।
দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি (ঘরোয়া পদ্ধতি)
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা জানার চেষ্টা করব দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি সম্পর্কে। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতিগুলো।
লেবুঃ একটি লেবু কেটে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিতে পারেন। এতে করে ফ্রিজের থাকা দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
ভিনেগারঃ হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার মিক্স করে যে কোন দুর্গন্ধ যুক্ত ফ্রিজ পরিষ্কার করতে পারেন। ভিনেগার আপনার ফ্রিজে থাকা দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
কফিঃ দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি হিসেবে কফি খুবই ভালো কাজ করে। একটি বাটিতে কফির গুড় রেখে সেটি ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিন। এতে করে ফ্রিজে থাকা গন্ধ দূর হবে।
এয়ারটাইট বক্সঃ ফ্রিজের ভিতর খাবার রাখার জন্য এয়ারটাইট বক্স ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, রসুন বাটা ইত্যাদি মসলাগুলো এয়ার টাইট বক্সে করে রাখলে ফ্রিজ দুর্গন্ধ কম হবে।
বেকিং সোডাঃ দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি হিসেবে বেকিং সোডা খুবই কার্যকরী। কিছু বেকিং সোডা একটি বাটিতে করে ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিন।
ফ্রিজের রেগুলেটরঃ তাপমাত্রা স্বাভাবিক ঠিক রাখুনঃ ইতিমধ্যে ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত সে সম্পর্কে আমরা আলোচনা করেছি। ফ্রিজের ভিতরের খাবারগুলো ভালো রাখতে হলে অবশ্যই ফ্রিজে রেগুলেটর সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
ভ্যানিলা এসেন্সঃ দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি হিসেবে ছোট ছোট তুলার টুকরার মধ্যে করে ভ্যানিলা এসেন্স এ ভিজিয়ে রাখুন। ভ্যানিলা এসেন্স ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে খুবই কার্যকরী।
পরিশেষে
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ছিল ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি। যারা ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি জানেন না আশা করি আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর এ বিষয়ে আপনার কোন মন্তব্য থাকবে না। পাশাপাশি ফ্রিজের রেগুলেটর কত রাখা উচিত, দুর্গন্ধ মুক্ত করতে ফ্রিজ পরিষ্কার করার পদ্ধতি (ঘরোয়া পদ্ধতি) ও ফ্রিজ পরিষ্কারের সময় কিছু সতর্কতা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। পোস্টটি আপনার কাছে ভালো লাগলে একটি শেয়ার উপহার দিতে পারেন। ধৈর্য সহকারে পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।