আসসালামু আলাইকুম, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। অনেকেই মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম জানার জন্য গুগলে মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম লিখে সার্চ করে থাকেন। আমাদের আজকের পোস্ট বিশেষ করে তাদের জন্য, যারা মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম জানতে চান। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম কি কি।
এছাড়াও আজকের পোস্টে তারাবির নামাজের দোয়া কখন পড়তে হয়, তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে, তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে, তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কত রাকাত পড়া যায়, তারাবির নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, তারাবির নামাজ পড়া কি বাধ্যতামূলক, তারাবির নামাজের শেষ সময়,তারাবির নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে, তারাবির নামাজ সম্পর্কিত হাদিস, সৌদি আরবে তারাবির নামাজ কত রাকাত ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত উত্তর দেওয়া রয়েছে।
তারাবি নামাজকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়। আরবিতে তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দটির অর্থ বিশ্রাম করা। রমজান মাসে ইশার চার রাকাত ফরজ নামাজ ও দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার পর, দুই রাকাত দুই রাকাত করে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত আদায় করা হয়। এই নামাজটিকে বলা হয় তারাবির নামাজ। শরীয়তের পরিভাষায় রমজান মাসে আদায় করা এই তারাবির নামাজ পড়াকালীন সময়ে প্রতি চার রাকাত পরপর বিশ্রামের জন্য কিছু সময় বসার নামই তারাবি।
তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া জেনে নিন – কি হবে তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ?
মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম গুলোর মধ্যে তারাবির নামাজ আদায় করার জন্য আলাদা নিয়ত রয়েছে। যেকোনো আমল বা এবাদত করার পূর্বে আমাদের নিয়ত করা প্রয়োজন। যারা তারাবির নামাজের নিয়ত ও দোয়া বা বাংলায় তারাবির নামাজের নিয়ত জানেন না, পোষ্টের এই অংশ থেকে দেখে নিতে পারেন।
বাংলায় তারাবির নামাজের নিয়ত – আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়য়ের নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার। (একাকি তারাবির নামাজ আদায় করলে)
আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবি সুন্নত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়য়ের নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার। (জামাতে নামাজ পড়লে)
এখানে তারাবির নামাজের নিয়ত আরবিতে উচ্চারণ করে বলতে হবে বিষয়টি এমন নয়। আপনি চাইলে বাংলায় তারাবির নামাজের নিয়ত করতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা আপনার ভাষা জানেন, অতএব আপনি যেই ভাষাতেই নিয়ত করেন না কেন। আপনার নিয়তটি সঠিক হলেই হবে, ইনশাআল্লাহ।
চার রাকাত পর পর তারাবি নামাজের দোয়া – মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন এর মধ্যে চার রাকাত পর পর তারাবি নামাজের দোয়া নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। আমাদের মাঝে চার রাকাত পর পর তারাবি নামাজের দোয়া হিসেবে একটি দোয়া প্রচলিত আছে। তবে এরকম কোন দোয়া হাদিসে নেই।
দু রাকাত দু’রাকাত করে চার রাকাত তারাবির নামাজ শেষ করার পর বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে। এই বিশ্রামের সময়টুকুতে আমরা একটু হাঁটাচলা করলাম, জিকির-আজগার করলাম, শুয়ে থাকলাম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে। অথবা এই বিশ্রামের সময়টুকুতে দোয়া করতে পারি, জিকির করতে পারি অথবা দেখে দেখে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। এটি আমাদের জন্য জায়েজ রয়েছে। অনেকেই তারাবির নামাজের এই বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট একটি দোয়া পড়তে বলেন। দুই রাকাত দুই রাকাত ৪ রাকাত তারাবির নামাজের পরে বিশ্রামের এই সময় নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই।
তারাবির নামাজ কিভাবে পড়তে হয় – তারাবির নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
পোষ্টের এই অংশে আমরা মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম বা তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি জানাবো ইনশাল্লাহ। মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম বা পুরুষদের তারাবির নামাজের নিয়ম যেটাই বলি না কেন উভয়ের ক্ষেত্রেই তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন একই। তারাবি নামাজ ফরজ বা ওয়াজিব নয়। এটি নফল সুন্নত পর্যায়ের। তারাবির নামাজ আমরা সুন্নত এর নিয়তে পড়তে পারি। তারাবির নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? দু’রাকাত দু’রাকাত করে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়। তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে নিম্নে দেওয়া হল।
আমরা যখন এশার নামাজ পড়বো, ইশার ফরজ নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করব। এরপর বিতর নামাজ আদায় করার পূর্বে আমরা তারাবির নামাজ পড়বো। তারাবির দুই রাকাত নামাজের নিয়ত করে অন্যান্য নামাজ যেভাবে যে নিয়মে করতে হয় তারাবির নামাজ ও ঠিক সেই নিয়মে পড়তে হবে।
-
প্রথমে আল্লাহু আকবার বলে হাত বাধতে হবে।
-
হাত বাধার পর ছানা পড়তে হবে তারপর সূরা ফাতেহা পড়তে হবে।
-
সুরা ফাতেহা পড়ার পর বিসমিল্লাহ বলে অন্য যে কোন সূরা মিলাতে হবে। আপনি যদি কোরআন খতম করতে চান তাহলে ধারাবাহিকভাবে খতম পড়তে পারেন। আবার আপনি যদি চান কোরআনের বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়বেন, সুরা ইয়াসিন থেকে পড়বেন, সূরা ওয়াকিয়া থেকে পড়বেন, সূরা আর রহমান থেকে পড়বেন কিংবা সূরা নাবা থেকে পড়বেন। কুরআনের যেখান থেকে আপনার মুখস্ত আছে বা মনে আছে আপনি চাইলে সেখান থেকে পড়তে পারেন। তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন এরকম নয় যে কোরআনের শেষের দশটি সূরা; সূরা ফীল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত এই দশটি সূরায় মিলিয়ে পড়তে হবে বিষয়টি এরকম বাধ্যতামূলক না।
অনেকে বলে থাকে, তারাবির নামাজ যারা খতম করবে না তারা সূরা ফীল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত দশটি সূরা পড়বে। হাদীসে এরকম কোন নিয়ম নেই। আপনি যতগুলো সূরা জানেন সমস্ত সূরা গুলো আপনি তারাবির নামাজের মধ্যে পাঠ করতে পারেন।
-
প্রথম রাকাতে একটু বড় সূরা পাঠ করবেন, দ্বিতীয় রাকাতে একটু ছোট সূরা পাঠ করবেন।
-
এভাবে দু রাকাত দু’রাকাত করে তারাবি সুন্নত নামাজের নিয়ত করে বাকি নামাজ শেষ করবেন অন্যান্য নামাজের মত স্বাভাবিক নিয়মে।
আপনি চাইলে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে তেলাওয়াত করতে পারেন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আপনি চাইলে এক রাকাতে একাধিক সুরাও পাঠ করতে পারেন। আপনার যদি মনে হয় আপনি প্রথম রাকাতে একসাথে ১০ টি সূরা পাঠ করবেন সেটাও করতে পারবেন। আপনি চাইলে এক রাকাতে ২০টি সূরাও পাঠ করতে পারেন কোন সমস্যা নেই। এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে আপনি তারাবির নামাজ আদায় করতে পারেন। লম্বা সময় নিয়ে তারাবির নামাজ পড়া উত্তম।
দু রাকাত দু’রাকাত করে চার রাকাত তারাবির নামাজ শেষ করার পর বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে। এই বিশ্রামের সময়টুকুতে আমরা একটু হাঁটাচলা করলাম, জিকির-আজগার করলাম, শুয়ে থাকলাম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে। অথবা এই বিশ্রামের সময়টুকুতে দোয়া করতে পারি, জিকির করতে পারি অথবা দেখে দেখে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। এটি আমাদের জন্য জায়েজ রয়েছে। অনেকেই তারাবির নামাজের এই বিশ্রামের সময় নির্দিষ্ট একটি দোয়া পড়তে বলেন। দুই রাকাত দুই রাকাত ৪ রাকাত তারাবির নামাজের পরে বিশ্রামের এই সময় নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই।
মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম
পুরুষ ও মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম একই। পার্থক্য শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে কিছু বিধান শর্ত রয়েছে যেগুলো পালন করে মহিলারা চাইলে তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যেতে পারবে। শর্তগুলো উল্লেখযোগ্য যে-
-
পরিপূর্ণ হিজাব থাকতে হবে
-
স্বামীর অনুমতি নিতে হবে
-
সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না
এছাড়াও মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ার জন্য বের হওয়ার ক্ষেত্রে যেন আরেকটি হারাম কাজ সংগঠিত না হয়; যেমন ড্রাইভারের সাথে একাকী বের হওয়া। মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম সমূহ নিচে উল্লেখ করা হচ্ছে।
যদি কোন নারী উল্লেখিত শর্তগুলোর কোনোটি ভঙ্গ করে সেক্ষেত্রে নারী স্বামী কিংবা অভিভাবক তাকে মসজিদে যেতে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখেন। শর্তগুলোর বিপরীত হলে বাধা দেওয়াই আবশ্যক হবে।
তারাবির নামাজের দোয়া কখন পড়তে হয়
আমরা যখন এশার নামাজ পড়বো, ইশার ফরজ নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করব। এরপর বিতর নামাজ আদায় করার পূর্বে আমরা তারাবির নামাজ পড়বো।
তারাবির নামাজ পড়া কি বাধ্যতামূলক – তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে
তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে বা তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে? এটা আমাদের সমাজের অনেকেই প্রশ্ন। অনেকে আছেন তারাবি নামাজের দোয়া জানেন না তাই তারাবি নামাজ পড়েন না, আর তারাবি নামাজ যেহেতু পড়েন না তাই রোজা রাখেন না। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের সমাজে একটি ভুল ধারণা। রামাদান মাসে সিয়াম বা রোজা একটি ভিন্ন ইবাদত এবং তারাবির নামাজ আদায় করা ভিন্ন ইবাদত। সিয়াম বা রোজা=ফরজ অন্যদিকে, তারাবির নামাজ=সুন্নাহ। তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবে? তারাবির নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? তারাবির নামাজ না পড়লে আমাদের কম বেশি ত্রুটি বা গুনাহ হতে পারে; তবে এর জন্য সিয়াম বা রোজা’র কোন সমস্যা হবে না।
তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কত রাকাত পড়া যায়
বিশ্বনবী (সাঃ) রমাদান কিংবা রামাদানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। সে ক্ষেত্রে ৮ রাকাত পড়তেন; তারাবি বলেন বা কিয়ামুল লাইল বলেন। আর বাকি ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে ওমরে ফারুক এর সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিচ্ছিন্নভাবে নামাজ আদায় করতে দেখলে তাদেরকে একত্রিত করলেন এবং তখন থেকে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত চালু হল।
মসজিদুল হারামে-মসজিদে নববীতে এখনও তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়া হয়। যেহেতু এটা ইবাদতের মাস যতবেশি পড়া যায় ততই ভালো। তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কত রাকাত পড়া যায় সেটা না খুঁজে নামাজের গুণগত মান ভালো করা। নামাজ কয় রাকাত পড়ব সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ না; গুরুত্বপূর্ণ নামাজের কোয়ালিটি। কত ধেরস্থির ভাবে নামাজ আদায় করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা ভালো।
তারাবির নামাজের শেষ সময় – তারাবির নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে
তারাবি নামাজ মূলত রাতের প্রথম ভোরেই পড়া সুন্নাহ। অর্থাৎ এসার নামাজের পরপর তারাবির নামাজ পড়ে নাও সুন্নত। কিন্তু তারাবির নামাজ ফজরের আযান অর্থাৎ সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়া যাবে। কিন্তু তারাবি নামাজের মূল ওয়াক্ত শুরু হয় সন্ধ্যা রাতে (এসার নামাজের পর)। তবে কেউ যদি তারাবির নামাজ মধ্যরাতে বা ১২ টার পরে পরে তাতে কোন সমস্যা নেই; নামাজ পড়া যাবে। তারাবির নামাজ সর্বনিম্ন কত রাকাত পড়া যায় এই প্রশ্ন যারা করেন, আশা করি উত্তর পেয়েছেন।
আজ আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। যারা মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, আশা করি আজকের পোস্টটি ভালো করে পড়ার পর মহিলাদের তারাবির নামাজের নিয়ম নিয়ে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না।