Breaking News
Home / Education / ঈদুল আজহা অর্থ কি? – What is Eid-ul-Adha?

ঈদুল আজহা অর্থ কি? – What is Eid-ul-Adha?

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সম্মানিত পাঠক ভাই ও বোন। আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব ঈদুল আযহা (Eid Ul Adha) সম্পর্কে। অনেকেই ঈদুল আযহা কি বা কেন পালন করে থাকি এ সম্পর্কে জানতে চেয়ে google এ সার্চ করে থাকেন Eid Ul Adha- ঈদুল আজহা অর্থ কি, ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম, ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত, ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম, ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ বা ঈদুল আজহার দিনের সুন্নত। যার ফলশ্রুতিতে আজ আমরা আপনাদের সাথে ঈদুল আজহা নিয়ে কিছু কথা  শেয়ার করতে চলেছি। তাহলে চলুন এবার শুরু করা যাক। 

ঈদুল আজহা অর্থ কি? - What is Eid-ul-Adha?

ঈদুল আজহা অর্থ কি? – What is Eid-ul-Adha?- ঈদুল আজহা নিয়ে কিছু কথা

মুসলিম উম্মাদের জন্য শরীয়ত সম্মত দুইটি ঈদ রয়েছে প্রতি এক বছরে।  আর সেই ঈদ দুটি হল ঈদ উল ফিতর ও ঈদ উল আযহা।  ঈদ (عيد) শব্দটি একটি আরবি শব্দ। ঈদ শব্দটি ‘আউদুন’ মাসদার থেকে এসেছে। ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- উৎসব, পর্ব, ঋতু, মৌসুম, প্রত্যাবর্তন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি।  প্রত্যেক বছর ঘুরে ঘুরে আসে বলে ইহাকে বলা হয় ঈদ। (আল-মু‘জামুল ওয়াফী, আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান, পৃ. ৭২৬। আল ফিক্বহুল মানহাজী, ১/২২২)

ঈদ শুরু হয় প্রথম হিজরীতেই।  আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগের নবীদের সময়  প্রচলন ছিল না।  মুসলমানদের জন্য ঈদ অন্যতম একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব।  এই ঈদের দিনে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে একসঙ্গে জামাতবদ্ধ হয়ে সালাত আদায় করেন।  এরপর বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, শুভেচ্ছা, দোয়া এবং আনন্দ ভাগাভাগি করেন সকলে একসাথে। প্রথম হিজরী সনে সিয়াম ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদুল ফিতরের সূচনা হয়। 

মক্কাবাসীরা যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপরে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার শুরু করল,  তখন তিনি হিজরত করে মদিনায় আসেন।  এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার লোকদের দুইটি উৎসব  পালন করতে দেখলেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,  তোমরা এ কিসের উৎসব পালন করছো? তারা জবাবে বলল,  আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে ধারাবাহিকভাবে এ উৎসবদ্বয় পালিত হয়ে আসছে। তাদের অনুকরণে আমরা প্রতিবছর এটি উদযাপন করে আসছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,  আল্লাহ তোমাদের এই দুইদিনের  বদলে এমন দুটি দিন দান করেছেন যেটা তোমাদের নির্বাচিত দিনদ্বয়ের চেয়ে উত্তম। দিন দুটি হচ্ছে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। (আবু দাঊদ, হা/১১৩৪; নাসাঈ, হা/১৫৫৬, সহীহ)

ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ হচ্ছে ত্যাগ ও উৎসর্গের ঈদ। প্রত্যেক বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পালিত হয় ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ।  আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য দুটি দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্ধারিত করে দিয়েছেন।  এই দিনগুলোতে ঈদের নামাজ পড়া সকল মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে।

পবিত্র আল-কুরআনের মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘অতএব তোমরা রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং নহর করো।’ (সূরা আল কাউসার, আয়াত নং ২)

ঈদের কিছু বাহ্যদৃশ্য

ঈদ আমাদের জন্য ইবাদত ও খুশি আনন্দ প্রকাশ এবং বৈধ খাদ্য গ্রহণের মাঝে সমন্বয় ভাবে এসেছে।  যার কারণে ঈদ একটি খুশি আনন্দ ও খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। তবে এমন কিছু গর্হিত কাজ করা যাবে না ঈদের দিনে, যা ইসলামে শিক্ষা ও আদর্শের সাথে মিল নেই। যেমন পুরুষ ও নারীর একসাথে সংমিশ্রণ হওয়া। নামাজ থেকে গাফেল হয়ে যাওয়া।  হারাম পানীয় পান করা বা গ্রহণ করা।  হারাম কোন খেলায় মেতে ওঠা এবং এ জাতীয় অন্যান্য যে সমস্ত হারাম কাজ রয়েছে সেগুলোও এর আওতাভুক্ত। মহান আল্লাহ তায়ালা ঈদের দিন একটি নামাজ বিধিবদ্ধ করেছেন যার নাম হচ্ছে ঈদের নামাজ।  এ নামাজটি হলো ঈদের প্রধান বাহ্যদৃশ্য। নিচের অংশে আমরা জানব ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে। 

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত

নামাজ আদায় করার পূর্বে ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত  পড়ে নিতে হবে।  নিয়ত অর্থ যেকোনো কাজ করার সংকল্প করা।  অর্থাৎ আপনি যদি ঈদুল আযহা নামাজ পড়ার জন্য নিয়ত করবেন। ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত নিচে দেওয়া হলও। এখান থেকে ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত শিখে নিতে পারেন।

ঈদুল আজহা অর্থ কি? - What is Eid-ul-Adha?

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ত (বাংলা)

আমি অতিরিক্ত ৬ তাকবিরসহ এই ইমামের পিছনে ঈদুল আযহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি। 
আমাদের মধ্যে অনেকেই ধারণা করে থাকেন নামাজের নিয়ত আরবিতে করা জরুরী।  এমনটি সঠিক নয়।  নামাজের নিয়ত যে কোন ভাষাতেই করা যায়।  নিয়ত মনে মনে করাই যথেষ্ট।  ঈদ-উল-আযহা নামাজের আরবি নিয়তের বাংলা উচ্চারণ আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। 

ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম – ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম 

আমাদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা বছরের দুইবার আসে।  অনেকে এমন আছেন যারা জানেন না কিভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয় বা করতে হয়।  পোস্টের এই অংশে আমরা ঈদুল আযহা নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করব। ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম  যারা জানেন না তারা এই পোস্ট থেকে জেনে নিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।  তাহলে চলুন শুরু করা যাক ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম (Eid Ul Adha)। 
অন্যান্য নামাজের মত ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম  স্বাভাবিক নয়।  মুসলিম উম্মার জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব।  ঈদের নামাজ ছাদবিহীন খোলা জায়গায় আদায় করা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজ আদায় করতেন খোলা জায়গায়। ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য যদি খোলা স্থানের ব্যবস্থা না থাকে তবে ঈদের নামাজ মসজিদেও আদায় করা যাবে। 
যেহেতু সারা বছরে আমাদের ঈদের নামাজ দুইবার পড়তে হয়।  যার ফলে অনেকেই ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ভুলে যান। নিশ্চয়ই আপনিও একই কারণে ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে এসেছেন। তাই ঈদুল আজহার নামাজের নিয়ম তুলে ধরা হলো- 

ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম (Eid Ul Adha)

ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা ‘ আল্লাহু আকবার’  বলে দুই হাত বাঁধতে হবে।  তাকবীরে তাহরিমার পর ছানা পড়তে হবে- ‘ সুবাহানাকা  আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
এরপরে অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিতে হবে।  এক তাকবীর থেকে আরেক তাকবীরের মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় বিরত হবে।  প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত উঠিয়ে তার ছেড়ে দিতে হবে।   তৃতীয় তাকবীর দেওয়ার পর উভয় হাত তাকবীরে তাহরিমার মত বেঁধে নিতে হবে।  আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়া।  সূরা ফাতেহা পড়া। সূরা মিলানো।  সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিতে হবে। এরপর নিয়মিত নামাজের মত রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে। 
দ্বিতীয় রাকাতে বিসমিল্লাহ পড়া।  সূরা ফাতেহা পড়া ও সূরা মেলানো।  সুরা মেলানোর পরে অতিরিক্ত তিন তাকবীর দিতে হবে।  প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত উঠিয়ে তা আবার ছেড়ে দিতে হবে।  তৃতীয় তাকবীর দিয়ে উভয় হাত তাকবীরে তাহরিমার মত করে বেঁধে নিতে হবে।  এরপর রুকুর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাওয়া এবং সেজদা আদায় করা।  বৈঠকে বসা,  তাশাহুদ, দুরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে  ঈদুল আযহা নামাজ সম্পন্ন করা। 
ঈদুল আযহার নামাজের সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া
اَللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَر لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَاللهُ اَكْبَر اَللهُ اَكْبَروَلِلهِ الْحَمْد
উচ্চারণঃ  আল্লাহু আকবার,  আল্লাহু আকবার,   লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। 
এরপর নামাজের শেষে ইমাম সাহেব  দুটো খুতবা দিবেন।  ইমাম সাহেব খুদবা চলাকালীন সময় মুসল্লীরা খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনবে।

পরিশেষে

প্রিয় ভাই ও বোন, আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়টি ছিল ঈদ উল আযহা (Eid Ul Adha) সম্পর্কে।  মুসলমানদের পবিত্র এই দিন সম্পর্কে আমাদের অনেকের মনে অনেক ধরনের প্রশ্ন রয়েছে।অনেকে এই বিষয়গুলো জানতে চেয়ে থাকেন।  তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আজকের  ঈদুল আযহা অর্থ কি? পোস্টে  উক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। পোস্টটি ভাল লাগলে আপনার বন্ধুর সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং এরকম ধর্মীয় পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বেশি বেশি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *