আজ আমরা আলোচনা করব স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়।বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি অতিরিক্ত এবং অসচেতনতার সাথে ব্যবহারের ফলে আমাকে স্মৃতিশক্তি কমে যাচ্ছে। স্মৃতি শক্তি কিভাবে ধরে রাখা যায় এবং কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সম্পর্কে জানতে চাই সবাই। আপনারদের সবার কথা মাথায় রেখে আজকের পোষ্টে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় সমূহ।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ও বাড়তে থাকে। তবে এই ভুলে যাওয়া যখন অতিরিক্ত আকারে ধারণ করে থাকে এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধাগ্রস্থ হতে থাকে, তখন একে বলা হয় ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় অবলম্বন করতে বলা হয় স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র অনুশীলন করার মাধ্যমে নয় বরং বিভিন্ন ধরনের খাবার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে অধিক কার্যকরী।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খাবার – স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়
পুষ্টিবিদরা বলেন, বর্তমান সময়ে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি কার্যকরী উপায়। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা জরুরি। মানসিক চাপ, উদ্বেগ কিংবা স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি কারণে মস্তিস্কের ক্রিয়া-কলাপ এর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করা প্রয়োজন। আপনার বুদ্ধি খুলবেন স্মৃতিশক্তি আগের চেয়ে বৃদ্ধি হবে।
ডালিমের রস
ডালিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ডালিমে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের কোষ কে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়াও ডালিম খেলে রক্ত সার্কুলেশন স্বাভাবিক থাকে, যেটা মস্তিস্ককে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে কিংবা পরে ডালিমের শরবত খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় ও বটে।
জামের মিল্ক শেক
দুধের উপকারিতা সম্পর্কে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। আমরা খুব সহজেই দুধের সাথে মিশিয়ে তৈরি করে ফেলতে পারি জামের মিল্ক শেক। মিল্কশেক আমাদের মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি নিজাম ব্লাড প্রেসার এর পরিমাণ ঠিক রাখতে সহায়তা করে। একই সাথে কোলেস্টরেল এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে জামের মিল্ক শেক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় গুলোর অন্যতম একটি।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকোলেটে রয়েছে 70% কোকোয়া। এটি ধমনীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে থাকে, মস্তিষ্ক ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়।
গ্রিন টি
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গ্রিন টি। গ্রিন টি শুধুমাত্র শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে না বরং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কে থাকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। এটি ছাড়াও এই উপাদানটি উপস্থিতি নিউরোট্রান্সমিটারের ক্রিয়া-কলাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে এবং উদ্বেগ কিংবা অতিরিক্ত মেজাজ কমাতে বিশেষ উপকারী। পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবেও বেশ কার্যকরী।
কফি
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম কফি। কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলো মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। ক্যাফেইনের মনোযোগ বৃদ্ধি, কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং মন ভালো করতে কফির বিকল্প নেই। এজন্যই বিশেষজ্ঞরা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে কফি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
বাদাম
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে বাদাম বেশ কার্যকরী। বাদামে থাকা ভিটামিন-ই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে। যেমন- কাঠ বাদাম ও আখরোট ভিটামিন-ই এর উৎস। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে বিকালের নাস্তার সাথে বাতাম রাখতে পারেন।
তৈলাক্ত মাছ
মানব শরীরে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন হতে পারে না। এজন্য খাবারের মাধ্যমে আমাদেরকে তা গ্রহণ করতে হয়। যেমন- স্যামন, সারডিন মিঠা পানি ও সামুদ্রিক মাছ থেকে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড গ্রহণ করা যেতে পারে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে তৈলাক্ত মাছ খাওয়া বেশ উপকারের।
ব্রকলি
ব্রকলিতে রয়েছে ভিটামিন কে। গ্লুকোসিনোলেটস এর ভালো একটি উৎস ব্রকলি। যেটি নিউরোট্রান্সমিটার, অ্যাসিটাইলকোলাইন স্মৃতি শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। যেটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সঠিক কার্যকারিতা পরিচালনা করতে ও আমাদেরকে স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে সহযোগিতা করে থাকে। এজন্য বলা হয় ব্রকলি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় গুলোর অন্যতম।
টমেটো
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় গুলোর অন্যতম টমেটো। টমেটোতে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। যেটা কোষের রেডিকল ক্ষয়ের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। ফলে আমাদের স্মৃতির অবক্ষয় হ্রাস পেতে থাকে। এজন্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে প্রতিদিন সালাদে টমেটো রাখুন।
পালং শাক
পাতা বহুল এই সবজির নাম পালং শাক। পালংশাক আমাদের জন্য নানান ভাবে উপকারী। পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন ই। আমাদের মস্তিষ্ককে বয়সে প্রভাব ও স্মৃতিভ্রংশ কমাতে বা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এজন্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে খাবারের সাথে পালং শাক রাখতে।
ডিম
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ডিম খাওয়ার অভ্যাস আমাদের ছোটবেলা থেকেই। ডিমের কুসুম রয়েছে কোলিন নামক অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানের ভরা। এই পুষ্টিকর উপাদান কৌসের সংকেত পৌঁছাতে সাহায্য করে থাকে। শর্ট টাইম মেমোরি বা স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া থেকে আমাদেরকে সাহায্য করে। তাই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে ডিম খাওয়ার বিকল্প নেই।
কুমড়ার বীজ
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কুমড়ার বীজ। একমুঠো কুমড়ার বীজ জিংক স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও কুমড়ার বীজ থেকে ভিটামিন বি ও ট্রিপটোফেন পাওয়া যায়।
এবার আলোচনা করব স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য যে কাজগুলো আমাদেরকে প্রতিদিন নিয়মিত করতে হবে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় হিসেবে সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আমাদেরকে বিশেষ কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় সম্পর্কে কিছু অভ্যাস।
পর্যাপ্ত ঘুম
যদি রাতে ঘুম কম হয়, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো খুবই জরুরী। ঘুম ভালো না হলে মস্তিষ্ক সাত বছর বেশি বুড়িয়ে যেতে পারে।
ঠান্ডা ঘর
গরমে থেকে ঠান্ডাই স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ তিনগুণ বেশি থাকে। এছাড়াও ঠান্ডা ঘর মাথা ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই সবসময় ঘরের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশি রাখবেন না।
গল্প শেষ থেকে শুরু করুন
একটি গল্প পড়া শেষ হয়ে গেলে পুরো গল্পটা মনে রাখুন। তারপর শুরু থেকে না করে শেষ বা পিছন থেকে গল্পটা মনে রাখার চেষ্টা করুন। এই কৌশলটি আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সচল রাখতে এবং শক্তিশালী করতে বেশ উপকারী।
হাটাহাটি
নিয়মিত হাঁটাচলা বা জগিং আমাদের শরীরকে ভালো রাখার পাশাপাশি ব্রেইনকেও সুস্থ রাখে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অন্তত 20 মিনিট হাঁটাচলা করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
প্রতিদিনের অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে
মস্তিষ্ক যেন নির্জীব হয়ে না যায় এজন্য প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে দিতে হয়। তাই প্রতিদিনের রুটিন ভেঙে নতুন নতুন কাজ করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে করে আমাদের ব্রেন নতুন কিছু শিখতে পারে।
পায়ের আংগুলের ম্যাসাজ
প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আংগুল মেসেজ করতে হবে। প্রথমে আঙুলের উপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নিচের দিকে যান। এই মেসেজটি আমাদের মস্তিষ্কের কোষের সাথে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে থাকে।
আমাদের আজকের আলোচনা গুলো স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় কে কেন্দ্র করে ছিল। আজকের আলোচনার প্রত্যেকটি বিষয় আপনার জন্য কিংবা আপনার বন্ধুর জন্য যদি সে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানতে চায়। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে এটা আমাদের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এজন্য আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিনযুক্ত খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত হাঁটাচলা করা, মস্তিষ্ককে নতুন কিছু ইত্যাদি বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে। আশা করছি, এই পোষ্টের বিষয় গুলো আপনি মেনে চলতে পারলে ধীরে ধীরে আপনার দুর্বল স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করতে পারবেন।