আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত পাঠক, পোস্টটি শুরুর পূর্বে তাদেরকে স্মরণ করছি যারা জানতে চান ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি? আমাদের জন্য ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি জানা খুবই জরুরী। সামনেই আমাদের ঈদ উল-ফিতর। ঈদের দিন বেশ কিছু আমল রয়েছে। ঈদের দিনের আমল গুলোর মধ্যে ঈদের দিনের সুন্নত কাজ অন্যতম। আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি।
মুসলমানদের জন্য সবচাইতে বড় দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদ উল-আযহা। ঈদ সম্পর্কে আমাদের অনেকের অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে যেমন- ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি, ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত, ঈদের নামাজ কোথায় হবে। এছাড়া অনেকে প্রশ্ন করেন, ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে, ঈদের নামাজ পড়া কি ফরজ, ঈদের নামাজে ইকামত আছে কি, ঈদের নামাজ একা পড়া যায় কিনা এবং ঈদের নামাযের তাকবীর সংখ্যা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। উক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা আজ এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। আপনি যদি জানতে চান ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি তাহলে পোস্টটি সম্পুর্ণ পড়তে থাকুন।
ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি – ঈদের নামাজ কোথায় হবে
নিচে ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি এর উত্তর দেওয়া হল:-
১) ঈদের দিনে অন্যান্য দিনের তুলনায় সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। (বায়হাকী, হাদীস নং ৬১২৬)
২) মেসওয়াক করা (তাবয়ীনুল হাকায়েক- ১/৫৩৮)
৩) গোসল করা। হাদিসে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) দুই ঈদের দিন গোসল করতেন। (মুসনাদে বাযযার, হাদিস: ৩৮৮০)
ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস: ৬০৯)
৪) শরীয়ত সম্মত সাজগোজ করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮)
৫) নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ঈদের দিন উত্তম পোষাকটি পড়া। ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি দুই ঈদে সুন্দরতম পোষাক পরিধান করতেন। (বায়হাকী : ১৯০১)
৬) সুগন্ধি (আতর) ব্যবহার করা। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০)
৭) ঈদুল ফিতর ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে বাড়ী থেকে মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন খেজুর, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া। কিন্তু ঈদুল আযহাতে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে কিছু না খেয়ে যাওয়া সুন্নত। ঈদুল আযহাতে ঈদের নামাজের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, প্রিয় রাসুল (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে কোন কিছু না খেয়ে বের হতেন না, অন্যদিকে ঈদুল আযহার দিনে তিনি ঈদের নামাযের পূর্বে কিছু খেতেন না। ঈদের নামাজ শেষ করে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। (আহমদ : ১৪২২) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি খেজুর না খেয়ে ইদ্গাহের উদ্দেশে বের হতেন না; এবং বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেতেন। (বুখারী : ৯০০)
৮) সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। (আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫)
৯) ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত। ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী, হাদীস নং-১৪২১)
১০) ঈদের দিনের সুন্নতগুলোর মধ্যে অন্যতম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সুন্নত হল পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। (তিরমিযী : ১৮৭)
১১) ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত, বিনা অপরাধে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় না করা। (বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮)
১২) ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, ফিরে আসার সময় সম্ভব হলে অন্য রাস্তা দিয়ে আসা।
১৩) ঈদুল ফিতর ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে করে তাকবির পড়তে থাকাঃ
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম এর অর্থঃ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার ইবাদত বন্দেগী কবুল করুন। (বায়হাকি: ২/৩১৯)
কিন্তু ঈদ-উল-আযহায় ঈদগাহে যাওয়ার সময় একই তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে পড়তে যাবে।
আমাদের মধ্যে অনেকেই জানিনা ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি। আপনাদের ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি এর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা উপরে ঈদের দিনের সুন্নত কাজ গুলো সাজিয়ে রেখেছি। যারা প্রশ্ন করেন ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি। আশা করি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন। ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি এর উত্তর হিসেবে উপরের ১৩ টি সুন্নত আমল করতে পারবেন, ইনশাল্লাহ।
ঈদের নামাজ কোথায় হবে – ঈদের নামাজ একা পড়া যায় কিনা
ঈদের নামাজ একা পড়া যায় কিনা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান অনেকেই। ঈদের নামাজ আদায় করার অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে জামাতের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করা। ঈদের নামাজের নিয়ম অনেকটা জুমা নামাজের মত। জুমা ও ঈদের নামাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও অনেকাংশেই নিয়ম গুলো একই রকম। এককথায় আপনাকে ঈদের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। যারা জানতে চান ঈদের নামাজ একা পড়া যায় কিনা, ঈদের নামাজ কোথায় হবে। নিশ্চয়ই প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন একা একা ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম নেই। কমপক্ষে তিনজন হলে নামাজ পড়ার জন্য জামাত তৈরি করতে পারবেন। অনেকেই ঈদের নামাজ কোথায় হবে জানতে চাই। ঈদের নামাজ উন্মুক্ত জায়গায় ঈদের নামাজ বা খোলা জায়গায় আদায় করা সুন্নত। কিন্তু খোলা জায়গায় আদায় করা সম্ভব না হলে মসজিদ কিংবা বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়া যাবে।জাবে অবশ্যই ঈদের নামাজ জামাতের সহিত আদায় করতে হবে। আপনি যদি চিন্তিত থাকেন ঈদের নামাজ কোথায় হবে এই ব্যাপারে। তাহলে ঈদের নামাজ বাসায় আদায় করতে পারবেন তবে নিচের দেওয়া নিয়মে ঈদের নামাজ বাসায় পড়তে পারবেন। ঈদের নামাজ একা পড়া যায় কিনা এর উত্তর হচ্ছে না। জামাতের সাথে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।
আরও পড়ুনঃ ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত
ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত – ঈদের নামাজ পড়া কি ফরজ
অনেক ভাই/বোন প্রশ্ন করেন, ঈদের নামাজ পড়া কি ফরজ, ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে, ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত? চলুন তাহলে জেনে নেই ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত।
এই ঈদের সালাতের হুকুম কি? ঈদের নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে স্কলারদের মতভেদ রয়েছে। ঈদের নামাজ আদায় সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। যাদের প্রশ্নও রয়েছে ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত তারা নিচের দেওয়া তথ্য গুলো থেকে খুব সহজেই জানতে পারবেন ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত।
মালিকি এবং শাফী মাজহাব
যারা জানতে চান ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত। মালিকি এবং শাফী মাজহাবের ঈদের নামাজ আদায় করাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এর নামাজ আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ) বলেছেন মালিকি এবং শাফী মাজহাব।
হাম্বলী মাযহাব
যারা প্রশ্নও করেন ঈদের নামাজ পড়া কি ফরজ। ঈদের নামাজ আদায় করা হাম্বলী মাযহাবের মতে ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ এলাকার কিছু লোক যদি ঈদের নামাজ আদায় করে তাহলে বাকি লোকদের উপর থেকে জিম্মাদারী কেটে যাবে।
হানাফী মাযহাব
যারা জানতে চান ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত। অন্যান্য মাযহাব থেকে হানাফী মাযহাবে ঈদের নামাজ আদায় করার গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে। হানাফী মাযহাব মতে ঈদের নামাজ আদায় করা হচ্ছে ওয়াজিব। খুবই গুরুত্বপূর্ণ; (ঈদের নামাজের নিয়ত)কেউ যদি ওয়াজিব তরফ করেন তাহলে সে ওয়াজিব তরফ করার কারণে গোনাহগার হবে। অর্থাৎ আপনাকে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে (ঈদের দিনের সুন্নত কাজ কয়টি)। আমরা যদি কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিপাত করি তাহলে দেখতে পাব; ঈদের নামাজ কি খুবই গুরুত্বের সাথে আদায় করা হয়েছে। ঈদের নামাজ না পড়লে কি গুনাহ হবে? এর উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ গোনাহ হবে।
এই অংশে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না সুন্নত। প্রশ্ন করে থাকেন ঈদের নামাজ পড়া কি ফরজ। আশা করি আপনাদের উত্তর পেয়ে গেছেন। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব অর্থাৎ ফরজ।
ঈদের নামাজে ইকামত আছে কি – ঈদের নামাজের তাকবির সংখ্যা
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা ঈদের নামাজে ইকামত আছে কি না এ বিষয়ে জানেন না। আবার অনেকে প্রশ্ন করেন ঈদের নামাজের তাকবীর সংখ্যা কয়টি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ঈদের নামাজে ইকামত আছে কি না এবং ঈদের নামাজের তাকবীর সংখ্যা কয়টি।
ঈদের নামাজের তাকবির সংখ্যা:- ঈদের নামাযে অতিরিক্ত ৬ তাকবীরের সহিত আদায় করতে হয়।.৬ তাকবিরসহ আরও বেশি তাকবিরের কথা হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। (ঈদের নামাজের নিয়ম)