আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত ভাই/বোন। আজ আমরা আলোচনা করব লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো এই সম্পর্কে। আমরা সবাই জানি লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। এই রাতের ইবাদত হাজার বছরের চাইতেও বেশি উত্তম। শবে কদরের নামাজের ফজিলত জানা আমাদের জন্য খুবই জরুরী। লাইলাতুল কদর রাতে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করা এবং সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা উত্তম। শবে কদরের ফজিলত জানতে পারলে আমাদের ইবাদতের আগ্রহ বেড়ে যাবে। তবে অনেকেই জানতে চান লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো, শবে কদরের ফজিলত ও শবে কদরের নামাজের তাসবিহ সম্পর্কে।
শবে কদর নামাজের নিয়ত কিভাবে করবেন
অনেকেই প্রশ্ন করেন শবে কদর নামাজের নিয়ত কিভাবে করব? নিয়ত মানে মুখে উচ্চারণ করা নয়। “আমি এখন কেবলা মুখী হয়ে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করব” এই কথাটি নিজের মতো করে মনে মনে সংকল্প করলেই বা ইচ্ছা করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। শবে কদর নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে হবে না। শবে কদর নামাজের নিয়ত হিসেবে নিচের নিয়মটি অনেকেই পড়ে থাকেন। এটি সঠিক শবে কদর নামাজের নিয়ত নয়।
স্বাভাবিকভাবে আমরা ফরজ নামাজ গুলোর ক্ষেত্রে যেভাবে নিয়ত করে থাকি শবে কদর নামাজের নিয়ত একই রকম করতে হবে। অর্থাৎ শবে কদর নামাজের নিয়ত হবে মনে মনে। শুধু শবে কদর নামাজের নিয়ত নয় দিনের বাকি ফরজ নামাজ গুলো এবং অন্যান্য সুন্নত নামাজের ক্ষেত্রেও মুখে নিয়ত করার বৈধতা পাওয়া যায় না। কোন কিছু করার চিন্তা মাথায় আসার পর সে ঠিক করার জন্য মনে মনে সংকল্প করায় নিহতের জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ আপনি যখন শবে কদর নামাজের জন্য দাঁড়াবেন মনে মনে সংকল্প করবেন “ কেবলামুখী হয়ে দু’রাকা’আত নফল সালাত আদায়ের নিয়ত করলাম” এতটুকু মনে মনে চিন্তা করলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো
আমরা কমবেশি সবাই জানি লাইলাতুল কদর বছরের শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম রাত। লাইলাতুল কদর রাতের ইবাদত হাজার বছরের চাইতে উত্তম। এজন্য লাইলাতুল কদর রাতে আমাদের বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে। লাইলাতুল কদর পড়ার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কিছু দোয়া আমাদের কে শিখিয়ে দিয়েছেন। শবে কদর নামাজের তাসবিহ পোস্টটি দেখলে আপনি লাইলাতুল কদরে পড়ার জন্য বেশকিছু দোয়া পেয়ে যাবেন। লাইলাতুল কদরের নফল ইবাদত করার মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত হচ্ছে নফল নামাজ আদায় করা। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা এখনো প্রশ্ন করেন লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো। যেহেতু লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য একটি উত্তম রাত এবং এই রাতের ইবাদত হাজার বছরের চাইতে উত্তম ইবাদত। এজন্য আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম জানতে হবে। যারা প্রশ্ন করেন লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো। তাদের জন্য আমাদের আজকের এই পোস্টটি তৈরি করা হয়েছে। লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো এর সুন্দর এবং সহজ বিবরণ আজকের এই পোস্টের তুলে ধরা হলো। এখন আর আপনি প্রশ্ন করতে পারবেন না লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো। কারণ এই পোস্টটি সম্পুর্ণ বললে আপনি লাইলাতুল কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো।
শবে কদর নামাজের নিয়ম:-
অন্যান্য সময়গুলোতে আমরা যেভাবেনামাজ পড়ি শবে কদর রাতেও সেভাবেই নামাজ পড়তে পারবো।
(১) তাকবীরে তাহরীমা দেওয়ার পর
(২) সানা পড়বো
(৩) আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতেহা পড়বো।
(৪) বিসমিল্লাহ সহ যে কোন সূরা পড়তে পারি। এখানে সূরা কদর বা সূরা এখলাছ পড়তে হবে এটা নির্দিষ্ট নয়। আপনি যে কোন সূরা পড়তে পারেন। যদি বড় কেরাত পড়তে চাই তাহলে বড় কেরাত পড়তে পারি।
(৫) রুকুতে যাবো
(৬) তারপর সেজদায় যাবো। (২ সেজদা)
(৭) ২ সেজদা দেওয়ার পর আবার আমি আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ বলে সুরা ফাতেহা পড়বো।
(৮) এরপর বিসমিল্লাহ সহ যেকোন সূরা মিলিয়ে পড়বো। তবে এখানে খেয়াল রাখবেন প্রথম রাকাতে একটু বড় সূরা পড়বেন এবং দ্বিতীয় রাকাতে অপেক্ষাকৃত একটু ছোট সূরা করবেন।
(৯) এরপর দু’রাকাত শেষ করার পর। তাশাহুদে বসবেন। তাশাহুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরাবেন। এভাবেই আপনার দুই রাকাত নামাজ সম্পূর্ণ হবে।
এভাবেই দু’রাকাত দু রাকাত করে নফল নামাজ পড়তে থাকবেন। আপনার ধৈর্য অনুযায়ী আপনি যতোটুকু সম্ভব শবে কদর রাতে এইভাবে নামাজ পড়বেন। আপনি চাইলে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন অথবা ১০,১২,২০,৩০ রাকাত বা তারচেয়েও বেশি পড়তে পারেন। আপনার ধৈর্য অনুযায়ী আপনি শবে কদরের রাতে এইভাবে নামাজ পড়বেন। শবে কদর নামাজ কত রাকাত বা লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো সেই সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানো হয়েছে। আশা করি এই বিষয়ে আর সমস্যা হবে না।
শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে
শবে কদরের রাতে বা লাইলাতুল কদরের রাতে আমরা বেশি বেশি নফল ইবাদত করব এবং সারারাত আল্লাহ তাআলার ইবাদতে কাটাব। কিন্তু অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে। বিতর নামাজ পড়ার সময় হচ্ছে এশার নামাজের পরপর। এশার নামাজের পরপর বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়া রমজান মাসে তারাবি নামাজ পড়ার পর জামাতের সহিত ইমামের সাথে বিতর নামাজ আদায় করা যায়।
এছাড়াও বিতর নামাজ তাহাজ্জুদ নামাজের একটি অংশ। এজন্য রাতের পুরো কিয়ামুল্লায়লকেও বিভিন্ন হাদিসে বিতর নামাজ বলা হয়েছে। বিতর নামাজকে বলা হয়েছে শেষ রাতের নামাজ। যখন পড়া হয় তাহাজ্জুদ নামাজ। তবে সঙ্গত কারণ থেকে থাকলে বিতর নামাজ এশার নামাজের সঙ্গে পড়ে নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। বিতর নামাজকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এখান থেকে আমরা স্পষ্ট হতে পারি, শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে! যেহেতু বিতর নামাজ কে বলা হয়েছে শেষ রাতের নামাজ। তাই আমরা যখন শবে কদরের নামাজ আদায় করব তখন একদম ফজরের আগ মুহূর্তে অর্থাৎ তাহাজ্জোতের পর পর আমরা বিতর নামাজ আদায় করে নেব। অতএব শবে কদরের নামাজ বিতর নামাজের আগে পড়তে হবে। শবে কদরের নামাজ মাগরিবের ইফতারির পর থেকেই শুরু হয়ে যায়। তাই সন্ধার পর থেকেই শবে কদরের নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। আশা করি, শবে কদরের নামাজ বিতরের আগে না পরে এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পেরেছি।
বিতর নামাজ পড়ার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বিতরের নামাজ পড়া আবশ্যক। যে ব্যক্তি বিতর আদায় করবে না, আমাদের জামাআতের সাথে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ)
শবে কদরের রাত চেনার উপায় – শবে কদরের লক্ষণ
রামাদান মাস জুড়ে বিরাজ করে আল্লাহ তাআলার রহমত বরকত ও ক্ষমার ঘোষণা। তবে আমরা হয়তো জেনেছি এই রামাদান মাসেরও মহিমান্বিত রজনী তথা লাইলাতুল কদর বা শবে কদর রয়েছে। লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত হাজার বছরের চাইতে উত্তম রাত। মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতে গোনাহগারদের ক্ষমা করে দেন। শবে কদর রাতে মানুষের আগামী এক বছরের ভাগ্য লেখা হয়। যারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাবেন এবং যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা চাইবেন ক্ষমা করে দিবেন। যেহেতু আল্লাহ তায়ালা তাদের আগামী এক বছর রিজিক, ভাগ্য, ভবিষ্যৎ ইত্যাদি সকল কিছু ফেরেশতাদের বুঝিয়ে দেন। শবে কদর রাতে নামাজের সময় আপনি চাইলে আল্লাহর কাছে আপনার আগামী এক বছরের ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক এমন দোয়া করতে পারেন। আপনার যত চাওয়া, আকাঙ্ক্ষা, মনের ইচ্ছা ইত্যাদি সকল কিছু এই রাতে আল্লাহর কাছ থেকে চেয়ে নিন। আপনার আখিরাত সম্পর্কে বেশি বেশি ভাবুন; মোনাজাতে এবং সেজদায় চোখের অশ্রু ফেলে আল্লাহর কাছে পিছনের সমস্ত গুনাহের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন।
শবে কদর রাত যেহেতু এতই বরকত ময় একটি রাত; মুসলমানদের কাছে শবে কদরের রাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতপূর্ণ একটি রাত। কিন্তু শবে কদরের রাত চেনার উপায় কি? কোন কোন লক্ষণ গুলো দেখলে বুঝতে পারবেন এটি শবে কদরের লক্ষণ। শবে কদরের রাত চেনার উপায় সম্পর্কে এখন আপনাদেরকে জানাবো। তার আগে জেনে নেই মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে শবে কদর সম্পর্কে কি বলেছেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“নিশ্চয়ই আমি (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”( সূরা কদর: আয়াত ১-৩)
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক শবে কদরের রাত চেনার উপায় কি। শবে কদরের রাত চেনার উপায় নিচে উল্লেখ করা হল:-
শবে কদরের লক্ষণ ০১
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ ঐ রাতের আলামত বা লক্ষণ হচ্ছে, রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে। তবে সে সময় তার কোন আলোক রশ্মী থাকবেনা। ( মুসলিম, হাদিস: ১৬৭০; ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১৬৫৫)
শবে কদরের লক্ষণ ০২
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লাইলাতুল কদরের রাতটি হবে প্রফুল্লময়। না গরম, না ঠান্ডা। সেদিন সূর্য উঠবে লাল বর্ণের, তবে দুর্বল থাকবে। ( ইবনে খুযাইমা হাদিস: ২১৯২)
শবে কদরের লক্ষণ ০৩
উবাইদা ইবনে সামাত রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ লায়লাতুল কদর শেষ ১০ রজনীতে রয়েছে। যে এই রাতে নিজের আমলের হিসেবে দাঁড়াবে, আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের এবং পরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। আর এই রাত্রি আছে এগুলোতে: নবম, সপ্তম, পঞ্চম, তৃতীয় এবং শেষ রাত।”
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, “লায়লাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে, আবহাওয়া প্রশান্তি থাকবে। না ঠান্ডা না গরম। সকাল পর্যন্ত আকাশে কোন উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। সে রাতে চাঁদের মতই সূর্য উঠবে তীব্র আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।” (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ২২৭৬৫)
শবে কদরের লক্ষণ ০৪
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ লায়লাতুল কদর উজ্জ্বল একটি রাত। না ঠান্ডা না গরম। সে রাতে কোন উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ৩/১৭৯; সহিহ আল-জামিঈ, হাদিস: ৫৪৭২)
শবে কদরের লক্ষণ ০৫
হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লাইলাতুল কদরে রয়েছে সপ্তম নবম অথবা বিংশ, সে রাতে ( পৃথিবীর) নুড়িপাথর সংখ্যক ফেরেশতা জমিনে নেমে আসে।” (মাজমাউল জাওয়ায়িদ, হাদিস: ৩/১৭৮; সহিহ আল-জামি, হাদিস: ৫৪৭৩)
শবে কদরের ফজিলত – শবে কদরের নামাজের ফজিলত
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হচ্ছে বছরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তম ও বরকতময় একটি রাত। মহান আল্লাহ তায়ালা লাইলাতুল কদরে পবিত্র মহাগ্রন্থ কোরআন শরীফ নাযিল করেছেন আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ) এর উপর। লাইলাতুল কদর রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মোকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা পাহাড়ের গুহায় মহান আল্লাহ পাক জিবরাঈল (আ:) এর মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি কুরআনুল কারীম অবতীর্ণের সূচনা হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
উচ্চারণঃ ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।
অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি এটি নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনীতে। (সূরা আল কদর: ১)
লায়লাতুল কদরের রাত একটি মহিমান্বিত রাত। লায়লাতুল কদরের রাত হাজার মাসের থেকেও বেশি উত্তম একটি রাত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
উচ্চারণঃ লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।
অর্থঃ লায়লাতুল কদর এক হাজার মাস থেকে উত্তম। (সূরা আল কদর: ৩)
অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের রাতে করা আমাদের আমল গুলো সারা বছরের এক হাজার মাস আমল করার চেয়েও উত্তম আমল।
লায়লাতুল কদর রাতে হযরত জিব্রাইল (আঃ) অন্যান্য ফেরেশতারা আল্লাহর নির্দেশে পৃথিবীতে অবতরণ করেন শান্তির বার্তা নিয়ে এবং সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত তারা পৃথিবীর অবস্থান করেন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, লাইলাতুল কদরের রাতে রামাদানের ২৭ বা ২৯ তম রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা কঙ্করের সংখ্যার চাইতেও বেশি থাকেন।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
উচ্চারণঃ তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।
অর্থঃ সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরীল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন। (সূরা আল কদর: ৪)
سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
উচ্চারণঃ ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা’ইল ফাজর।
অর্থঃ শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।
লায়লাতুল কদর রাতে মহান আল্লাহতালা তার সকল সৃষ্টির ১ বছরের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। (সূরা আল কদর: ৫)
আমাদের মুসলমানদের জন্য লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের ফজিলত অনেক বেশি। আমাদের সকলের উচিত শবে কদর রাতে সকল কাজকর্ম ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তাআলার ইবাদত নিজেকে সমার্পণ করা। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে অধিক সওয়াব লাভের আশায় ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শবে কদরের রাতে আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগী করবে, মহান আল্লাহতালা ওই ব্যক্তির পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন, ইনশাল্লাহ।
আরও পড়ুনঃ শবে কদর নামাজের নিয়ত
শবে কদরের নামাজের তাসবিহ
অনেকেই জানতে চান শবে কদরের নামাজের তাসবিহ গুলো। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা লাভের জন্য পবিত্র কুরআনুল কারীম থেকে সংগ্রহীত ১১টি দোয়া। দোয়াগুলো শবে কদরের নামাজের তাসবিহ হিসেবে পড়তে পারবেন। শবে কদরের নামাজের তাসবিহ নিচে দেওয়া হল-
শবে কদরের দোয়া
পবিত্র লাইলাতুল কদরের দোয়া শবে কদরের দোয়া রয়েছে। রমজানের শ্রেষ্ঠতম এই পবিত্র শবে কদরে মহান আল্লাহতালার উপর বিশ্বাস রেখে যদি কোন ইবাদত সোয়াবের আশায় করা হয় তাহলে পূর্বের সকল গোনাহ মহান আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। শবে কদরের দোয়াটি হচ্ছে-
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণঃ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
আরও পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস
উক্ত দোয়াটি হচ্ছে শবে কদরের দোয়া। শবে কদরের রাতে শবে কদরের দোয়া বেশি বেশি পড়ুন। এছাড়াও রমজানের অন্যসব দিনগুলোতেও শবে কদরের দোয়া পড়তে পারেন। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক রাতে এই দোয়াটি বেশি বেশি করে পড়া।
এছাড়াও আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার জন্য পবিত্র আল-কুরআনে তিনি বান্দার জন্য অনেকগুলো দোয়া তুলে ধরেছেন। নামাজের সেজদা অথবা তাশাহুদ সহ এবাদত বন্দেগিতে পড়া যাবে। উক্ত দোয়া গুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
১) رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
উচ্চারণঃ “ রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।
অর্থঃ হে আমার প্রভু! আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার উপরে রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী। ( সূরা মুমিনুন: আয়াত ১১৮)
২) رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
উচ্চারণঃ “রব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমিন।”
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনি তো দয়ারব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমিন। লুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (সূরা মুমিনুন: আয়াত ১০৯)
৩) رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
উচ্চারণঃ “রাব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফিরলি।”
অর্থঃ হে আমার প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি; অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। ( সূরা কাসাস: আয়াত ১৬)
৪) رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণঃ “ রব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা যুনুবানা ওয়া ক্বিনা আযাবান নার।”
অর্থঃ হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। ( সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৬)
৫) رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
উচ্চারণঃ “রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।”
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। ( সূরা আরাফ: আয়াত ২৩)
৬) رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
উচ্চারণঃ “রাব্বানা গফিরলি ওয়ালি ওয়ালি দাইয়া ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।”
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন। (সূরা ইব্রাহীম: আয়াত ৪১)
৭) سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
উচ্চারণঃ “ সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।”
অর্থঃ আমরা আপনার বিধান শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আপনার দিকেই তো আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল বাকারা: আয়াত ২৮৫)
৮) رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنتَ مَوْلاَنَا
উচ্চারণঃ “ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আনতা মাওলানা ফানসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।”
অর্থঃ হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিও না। আমাদের পাপ মোচন করো। আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমিই আমাদের প্রভু। (সূরা বাকারা: আয়াত ২৮৬)
৯) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
উচ্চারণঃ রাব্বানাগফিরলানা ওয়ালি ইখওয়ানি নাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ইমানি।
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা যা আমার ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে; তাদের কেউ ক্ষমা করুন ( সূরা হাশর: আয়াত ১০)
১০) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
উচ্চারণঃ রাব্বানাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া ইসরাফি ফি আমরি ওয়া ছাব্বিত আকদামানা ওয়ানসুরনি আলাল কাওমিল কাফিরিন।
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে আপনার সীমালংঘন হয়ে গেছে; সেগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৪৭)
১১) رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
উচ্চারণঃ “রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মায়াল আবরার।”
অর্থঃ হে আমাদের প্রভু! সুতরাং আমাদের গোলাগুলো ক্ষমা করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন। ( সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৯৩)
আরও পড়ুনঃ শবে কদরের ফজিলত
মুমিন-মুসলমানদের উচিত, নামাজের মধ্যে সেজদারত অবস্থায় এই তাজবিহগুলো পড়া। অথবা শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ও দুরুদ পড়ার পর নিজেদের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কোরআনে বর্ণিত এই দোয়া গুলো বেশি বেশি করে পড়া।
আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করেছি লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো সেই সম্পর্কে। লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো জানানোর পাশাপাশি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে তাদের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সঠিক তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করেছি। এরপরও যদি কোন ভুল ত্রুটি পান অবশ্যই মাফ করবেন এবং কমেন্টে জানাবেন আমরা সেটি সংশোধন করে দিব। আল্লাহ আমার এবং আপনার সকলের দোয়া কবুল করুন এবং আমাদেরকে মাফ করে দিন। আমিন।