আসসালামু আলাইকুম, সম্মানিত প্রিয় পাঠকবৃন্দ। অনেকেই জানতে চান শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে। শবে কদরের দোয়া সকলের জানা উচিত। বছরের শ্রেষ্ঠ দিন শবে কদরের দিন। এই দিনে বেশি বেশি শবে কদরের দোয়া পড়তে হবে। শবে কদরের দোয়া সম্পর্কে আমরা এই পোস্টে আলোচনা করবো। পাশাপাশি আপনাদের শবে কদর সম্পর্কে হাদিস জানাবো। শবে কদরের দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে বেশি বেশি শবে কদরের দোয়া পড়তে বলেছেন রাসুল (সাঃ)।
পবিত্র মাহে রমজানের মধ্যে সবথেকে শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্র রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদরের রাত শবে কদরের রাত। শবে কদরের রাত রমজানের নাজাতের রাত্রিগুলোতে পালন করতে বলেছেন রাসুল (সাঃ) অর্থাৎ রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর বা শবে কদর হয়ে থাকে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কিছু হাদিস জানাবো। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস-এর মধ্যে পাওয়া গেছে রাসুল (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে শবে কদরের দোয়া বা লাইলাতুল কদর দোয়া শিখিয়েছেন। প্রথমে আমরা শবে কদরের দোয়াটি দেখে নেই। এরপর শবে কদর সম্পর্কে হাদিস জানবো।
শবে কদরের দোয়া – লাইলাতুল কদরের দোয়া
পবিত্র লাইলাতুল কদরের দোয়া শবে কদরের দোয়া রয়েছে। রমজানের শ্রেষ্ঠতম এই পবিত্র শবে কদরে মহান আল্লাহতালার উপর বিশ্বাস রেখে যদি কোন ইবাদত সোয়াবের আশায় করা হয় তাহলে পূর্বের সকল গোনাহ মহান আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। শবে কদরের দোয়াটি হচ্ছে-
উক্ত দোয়াটি হচ্ছে শবে কদরের দোয়া। শবে কদরের রাতে শবে কদরের দোয়া বেশি বেশি পড়ুন। এছাড়াও রমজানের অন্যসব দিনগুলোতেও শবে কদরের দোয়া পড়তে পারেন।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস – শবে কদর সম্পর্কে হাদিস
লায়লাতুল অর্থ রাত/রজনি এবং কদর অর্থ ভাগ্য/তকদীর। এক কথায় লায়লাতুল কদর অর্থ তকদিরে রাত বা ভাগ্য রজনী। লাইলাতুল কদর আমাদের জন্য কত ফজিলত পূর্ণ একটি রাত এটা আমরা অনেকেই জানি না। আমরা যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস গুলো দেখি তাহলে বুঝতে পারবো লায়লাতুল কদর আমাদের জন্য কত ফজিলত পূর্ণ একটি রাত। অনেকেই লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস জানতে চান। লায়লাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস জানতে পারলে শবে বরাতের রাত ইবাদত করার আগ্রহ ইচ্ছাশক্তি অনেকখানি বেড়ে যাবে। চলুন তাহলে শবে কদর সম্পর্কে হাদিস জেনে নেই।
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কিতাবে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস বা শবে কদর সম্পর্কে হাদিস এসেছে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস নিম্নরূপঃ-
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ০১-
** দাউদ শরীফের উল্লেখ আছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেছেন, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন-
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটাতে পারল না, তার মত হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই”। মহানবী (সাঃ) রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফে বসতেন। যাতে করে শবে কদরের রাত বা লাইলাতুল কদর হাত ছাড়া হয়ে না যায়। ( মুসলিম, হাদিস নং- ১১৬৭)
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ০২-
** ইবনে মাজাহ শরীফে উল্লেখ্য আছে, মহানবী রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন-
“যে লোক লাইলাতুল কদর থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল, সে যেন সমস্ত কল্যাণ হতে পরিপূর্ন বঞ্চিত হয়ে গেল”
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ০৩-
** মহানবী রাসুল (সাঃ) বলেছেন- কেউ যদি লাইলাতুল কদর বা শবে কদর খুঁজতে চায় তাহলে সে যেন জমাদানের শেষ ১০ রাত্রে লাইলাতুল কদর খোঁজ করে। ( মুসলিম, হাদিস নং- ৮২৩) এজন্য আমাদের উচিত রামাযানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাত গুলো (২১,২৩,২৫,২৭ ও ২৯) তম রাতগুলো বেশি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতের সাথে কাটানো।
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ০৪-
** হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি একদিন মহানবী রাসুল (সাঃ) এর নিকট জিজ্ঞাসা করেছিলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ভাগ্যক্রমে লায়লাতুল কদর রাত সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে আমি কি করবো? তখন মহানবী রাসুল (সাঃ) লাইলাতুল কদরের দোয়া শিখিয়ে দেন। দোয়াটি হচ্ছে-
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফয়া ফা ‘ফু আন্নি) । (তিরমিজি হাদীস নং ৩৫১)। উক্ত শবে কদরের দোয়া বা লাইলাতুল কদরের দোয়া যাই বলি না কেন, রমজানের শেষ ১০ দিন শবে কদরের দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে। লাইলাতুল কদরের দোয়া উপরে বাংলা উচ্চারণ সহ দেওয়া হয়েছে। শবে কদরের দোয়াটি আমাদের ওয়েবসাইট থেকে মুখস্ত করে নিতে পারেন।
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ০৫-
** মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আরও বলেছেন-
“তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিন শবে কদরের খোঁজ কর” (মুসলিম হাদিস নং ১১৬৯)
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস ০৬-
**মিশকাত শরীফে উল্লেখ আছে,
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন- “ যদি তোমরা তোমাদের কবরকে আলোকময় করতে চাও তাহলে তোমরা লাইলাতুল কদরের জেগে জেগে ইবাদত করো” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ “ যদি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব অর্জনের আশায় পবিত্র নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তাহলে তার পূর্বের সকল গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি হাদিস নং ৬৭২)।
উপরে ০৬টি শবে কদর সম্পর্কে হাদিস দেওয়া হয়েছে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস গুলো ভালো লাগলে অথবা আপনার বন্ধু যদি লাইলাতুল কদরের হাদিস জেনে না থাকে তাহলে পোস্টটি তার সাথে শেয়ার করতে পারেন। ফলে আপনার বন্ধুও শবে কদর সম্পর্কে হাদিস জানতে পারবে এবং লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বুঝতে পারবে।
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব – লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস
আমাদের জন্য লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অনেক বেশি। অনেকেই লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব জানেন না। শবে কদর রাতে গুরুত্ব জানতে পারলে আমরা এই রাতে ইবাদত করার ইচ্ছা ও ইবাদতে তৃপ্তি পাবো। চলুন তাহলে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব জেনে নেওয়া যাক।
লায়লাতুল কদর অর্থ তকদিরে রাত বা ভাগ্য রজনী। পবিত্র কোরআনে ও সহিহ হাদিসে উল্লেখ্য আছে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব। লাইলাতুল কদর যেটা আমরা শবে কদর নামেও জেনে থাকি। শবে কদরের রাতে মহান আল্লাহ্ তায়ালা তার বান্দাদের জীবনের সকল গোনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন। সারা বছরের মধ্যে লাইলাতুল কদর খুবই সম্মানিত একটি রাত। লাইলাতুল কদরের রাতে মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের প্রিয় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিল করেছিলেন। হাজার রাতের থেকে উত্তম শবে কদরের রাত। শবে কদর রাতের ইবাদত হাজার বছরের ইবাদত থেকে উত্তম।
শবে কদর সম্পর্কে হাদিস গুলো পড়লে দেখতে পাবো প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) লাইলাতুল কদরের এই সম্মানিত বা মহিমান্বিত রাতটি রমজান মাসের শেষ ১০দিন খুঁজতে বলেছেন। শবে কদর সম্পর্কে হাদিস অনুসন্ধান করলে এটাও দেখতে পাবো। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফে বসতেন। যাতে কোনভাবেই মহিমান্বিত এই লাইলাতুল কদরের রাত থেকে বঞ্ছিত না হয়। এই পবিত্র রাতে বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার ইবাদত-বন্দেগী করতে পারেন এজন্য।
মহানবী রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিন্তু আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটাতে পারল না, তার মত হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই”।
বুঝতেই পারছেন আমাদের জন্য লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে কোনভাবেই যেন আমরা লাইলাতুল কদরের রাত থেকে বঞ্ছিত না হই। এই রাতে আমাদেরকে ইবাদত-মন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে হবে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে পবিত্র এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আজ আমরা শবে কদরের দোয়া ও শবে কদর সম্পর্কে হাদিস নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়াও লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব জানতে পেরেছি। উক্ত বিষয় জানার পর সঠিকভাবে আমল করতে পারলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত আমরা পাবো, ইনশাআল্লাহ। পোস্টটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। শবে কদর সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।